বরগুনায় বেড়েছে শিশু শ্রম, অব্যাহত নির্যাতন

এম.এস রিয়াদ, (বরগুনা) :
করোনা মহামারী দীর্ঘদিনের বন্ধে অলস সময় পার করতে বাধ্য করেছে দেশের প্রতিটি মানুষকে। ভেঙ্গে দিয়েছে অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি। যা বর্তমানে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ফলে পরিবারের ছোট্ট শিশুটি ঝরে পড়েছে তার মৌলিক চাহিদা শিক্ষা থেকে।
শিশুরা নেমেছে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। ফলে নানা ধরনের প্রবঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে। ঠিকই কাজের জন্য খাটিয়ে নিচ্ছে এই কোমলমতি শিশুদের। অথচ সঠিক পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। শিকার হতে হচ্ছে নির্যাতনের। এতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখা গেছে অসংখ্য শিশুদের।
কেবল বরগুনা শহরেই নয়, অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এসব কোমলমতি শিশুদের মধ্যে কেউ রিকশা চালাচ্ছে, আবার বিভিন্ন ওয়ার্কশপে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছে। খাবার হোটেল গুলোর সামনে দাঁড়িয়ে খদ্দের ডাকায় মিষ্টি কথায় মন ভুলানোর চেষ্টার যেনো কোন কমতি নেই।
শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৯ কোটি ৪০ লাখ কমিয়ে আনা হয়েছে। তা আবারও হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে।
১২ জুন ২০২০ - আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউনিসেফ এক নতুন প্রতিবেদনে বলেছে- কোভিড-১৯ সংকটের ফলশ্রুতিতে আরও লাখ লাখ শিশুকে শিশু শ্রমে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, যা গত ২০ বছরের অগ্রগতির পর প্রথম শিশু শ্রম বাড়িয়ে দিতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়- এরই মধ্যে শ্রমে থাকা শিশুদের হয়ত আরও বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে বা তাদের আরও খারাপ পরিবেশে কাজ করতে হতে পারে। তাদের মধ্যে আরও বেশি সংখ্যক শিশুকে হয়ত ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিযুক্ত হতে বাধ্য হবে, যা তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকির কারণ হবে।
কোভিড-১৯ এর ফলে দারিদ্র্য বেড়ে গিয়ে শিশু শ্রম বাড়াবে। কারণ বেঁচে থাকার জন্য পরিবারগুলো তাদের কোমলমতি শিশুদের কাজে নিযুক্ত করতে বাধ্য হবেন।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি তোমো হোযুমি অনলাইনে তাদের দেয়া এক বার্তায় বলেন- “সবচেয়ে অসহায় শিশুদের জীবন, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যতের ওপর কোভিড-১৯ মহামারী বিশেষ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। স্কুল বন্ধ ও পরিবারের আয় কমে যাওয়ায় অনেক শিশুর জন্য শ্রমে যুক্ত হওয়া এবং বাণিজ্যিকভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
শিশুশ্রম ও নির্যাতন প্রতিরোধে এ সমাজকেই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে এগিয়ে আসতে হবে। হতে হবে প্রতিটি পরিবারকে সচেতন। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় স্কুলগামী শিশুটি আবার ফিরে আসতে পারে শিক্ষা গ্রহণের জন্য তার কাঙ্খিত স্বপ্নপূরণে সহযোগী আলয়ে।
করোনায় ভেঙে পড়া এসকল পরিবারের পাশে দাঁড়ানো একান্ত কর্তব্য। ভেঙেপড়া ওই পরিবার থেকেই একটি শিশু আলো হয়ে ফুটতে পারে বিশ্বজুড়ে। তাই এদের একার পক্ষে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। আর অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে না উঠতে পারলে তাদের কোমলমতি শিশুদের কর্ম ক্ষেত্রে যেতে বাধ্য করবেন পরিবার।
ফলে দিন দিন বাড়তে থাকবে শিশু নির্যাতনের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ঝরে যাবে একটি সুন্দর পাপ্রি ছড়ানো ফুল। বিগত দিনে দেশের বিভিন্ন জেলাতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিশুদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের চিত্র।
বরগুনা জেলায় স্থায়ী একটি শ্রম অধিদপ্তর এর কার্যালয় থাকলে শিশু শ্রম নিয়ে খুব নিখুঁতভাবে কাজ করতে পারতেন। ধীরে ধীরে কমে আসত এসকল দৈহিক ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের প্রবণতা।
আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ। ওই দিন থেকেই শুরু হোক ঝরে পড়া শিশুদের খুঁজে বের করে শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনা। এসকল কোমলমতি শিশুদের বিদ্যালয় ফিরিয়ে এনে মেধা বিকশিত করতে সর্বাত্তক সহযোগিতা করবেন স্থানীয় প্রশাসন। এমনটাই আশাবাদী বরগুনা শিক্ষানুরাগী ও সচেতন মহল।
বরগুনা জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন- শিশুদের ঝরে পড়ার মূল কারণ করোনা মহামারী। বৈশ্বিক মহামারীর কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অধিক পরিমাণে শিশুরা ঝরে পড়েছে। কিন্তু এই শিশুদের তাদের শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনতে প্রথমেই পরিবারকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন- অর্থনৈতিক মন্দায় দেবে থাকা পরিবারকে সচল করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্যই সহযোগিতা প্রয়োজন। তা না হলে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া শিশুটিকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় চলে যাওয়া কর্মক্ষেত্র থেকে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান গনদের একটি ব্যতিক্রমী ভূমিকা পালন করা জরুরি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে না আসা শিশুটির খোঁজখবর করে শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব জরুরী বলেও মন্তব্য করেন এই শিশু কর্মকর্তা।
শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা শিশুদের পড়াশোনা থেকে অনেকটা দূরে থাকার কারণ হিসেবে অনলাইন গেমস্ ও পরিবারের উদাসীনতাকে দায়ী করেন।
শিশুদের বিনোদনের জন্য কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, গান ও নৃত্য শিক্ষায় ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনতে বরগুনা শিশু একাডেমীতে ফ্রী ক্লাসের ব্যবস্থা করবেন বলে জানান তিনি।