South east bank ad

রাজশাহীর নাবা ক্যাটল ফার্মে মাসে সাড়ে ৯ লাখ টাকার দুধ বিক্রি

 প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:০৫ অপরাহ্ন   |   সারাদেশ

রাজশাহীর নাবা ক্যাটল ফার্মে মাসে সাড়ে ৯ লাখ টাকার দুধ বিক্রি
আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো) :

দেশি জাতের গাভী প্রজনের মাধ্যমে উন্নত জাত তৈরী করাই ছিল রাজশাহীর পবা উপজেলার মাহেন্দ্রা এলাকায় অবস্থিত ‘নাবা ক্যাটল ফার্মের’ প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু ফার্ম প্রতিষ্ঠার দেড় বছরের মধ্যেই উন্নতজাতের ষাড়, গাভী, বকনা ও বাছুর পালন করে বেশ লাভবান হচ্ছেন এই ফার্ম কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এই ক্যাটল ফার্মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডেইরি বা দুধ উৎপাদন। ৪২টি উন্নত জাতের গাভী থেকে প্রতিদিন সাড়ে ৪ শত লিটার দুধ আসে। সেই দুধ চিলার মেশিনের (ঠা-া করা মেশিন) মাধ্যমে ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নিয়ে এসে প্যাকেটিং মেশিনের মাধ্যমে প্যাকেট করে প্রতি লিটার দুধ ৭০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সেই হিসেবে প্রতি মাসে এই ডেইরি ফার্ম থেকে ৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকার দুধ বিক্রি হচ্ছে। 

সরেজমিনে নাবা ডেইরি ও ক্যাটল ফার্মে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- গত বছরের মার্চে ২১ বিঘা জমির ওপর এ্ ফার্ম প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরুতে ১৪০টি ষাড় ও ১৫০টি গাভী পালনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় ক্যাটল ফার্মের যাত্রা। এরপর থেকে ক্যাটল ফার্মের বিভিন্ন ক্যাটাগরির গরু পালন শুরু হয়। ষাড়, গাভী, বকনা ও বাছুর মিলে বর্তমানে ফার্মটিতে ৫৫০টি গরু রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উন্নত জাতের বাছুর উৎপাদনের জন্য দেশি গাভী রয়েছে ২৬০টি, দুধ উৎপাদনের জন্য উন্নত জাতের (ফ্রিজিয়ান ও জার্সি) গাভী রয়েছে ৪২টি, ষাড় ১২৮টি এবং ফার্মে উৎপাদিত বাছুর রয়েছে ১২০টি।   

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিন মাস আগে নাবা ক্যাটল ফার্মে যুক্ত হয় দুধ উৎপাদন। তখন থেকে এই ফার্মের নামকরণ হয় ‘নাবা ডেইরি এন্ড ক্যাটল ফার্ম’। ফার্মটি পরিচালনার জন্য সবমিলিয়ে ৫৪ জন লোক কাজ করেন। প্রত্যেকের কাজ ভাগ করা। তাদেরই একজনের নাম মো. মর্তুজা আলম। তিনি এই ফার্মের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। 

তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে ব্যবসায় কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। চলতি চছরের এপ্রিল-মে এর দিকে বিক্রির জন্য অনেক গরু প্রস্তুত হয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রি করতে না পারায় কিছু লোকসান গুনতে হয়েছে। কেননা- ফুল ফ্যাট হয়ে যাওয়ার পর গরু কিন্তু আর বাড়ে না। এই নির্দিষ্ট সময়ের পর গরুকে যতই খাওয়ানো হোক না কেন কোনো লাভ নেই। এরপর থেকে গরুকে যা কিছু খাওয়ানো হয় এটি লোকসান। সেই লোকসানেই আমাদেরকে পড়তে হয়েছিল। প্রায় ২-৩ মাস এসব গরুকে অতিরিক্ত লালন-পালন করা হয়েছে। আর একটি গরু প্রতি মাসে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার খাবার খায়। 

করোনাকালে এবার ঈদুল আযহায় ব্যবসা কেমন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোরবানী উপলক্ষ্যে ৩০০ গরু প্রস্তুত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২৮৬টি গরু (লাইফ ওয়েট ৯৮ হাজার ৬০০ কেজি) বিক্রি করতে পেরেছি। লাইফ ওয়েটে প্রতি কেজি মাংসের দাম ৪২০ টাকা ধরে গরুগুলো বিক্রি করা হয়েছে। সেই হিসেবে, ২৮৬ টি গরু ৪১,৪১২,০০০ টাকায় (৪ কোটি ১৪ লাখ ১২ হাজার) বিক্রি হয়েছে।’

ডেইরি ফার্মে দুধ উৎপাদন ও বাজারজাত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ফার্ম থেকে প্রতিদিন সাড়ে ৪ শত লিটার উৎপাদিত  দুধ প্যাকেটজাত করে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন, দুধ যখন দহন করা হয় তখন এই দুধ ২৭-২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় থাকে। পরে চিলার মেশিনের (ঠা-া করা মেশিন) মাধ্যমে ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নিয়ে এসে এই দুধ প্যাকেটিং মেশিনের সাহায্যে প্যাকেটজাত করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে ৫৫০ টি গরুর জন্য দৈনিক ১ টন রেডি ফিট ও ২ টন ঘাস লাগে। আর এক টন রেডি ফিটের মূল ৩৩.৫০০ (৩৩ হাজার ৫০০) টাকা ও ২ টন ঘাসের মূল্য ৮,৮০০ (৮ হাজার ৮০০)  টাকা। সেই হিসেবে বর্তমানে প্রতি মাসে গরুর খাবারে ব্যয় হয় ১২ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।’ 

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘রাজশাহী কৃষিনির্ভর এলাকা। এই অঞ্চলে শিল্প-কারখানা কিংবা অর্থনৈতিক জোন নেই বললেই চলে। যার কারণে এই অঞ্চলে বেকার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। নাবিল গ্রুপের পরিচালনায় প্রতিষ্ঠিত এই নাবা ডেইরি এন্ড ক্যাটল ফার্ম রাজশাহী অঞ্চলের কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে কিছুটা হলেও ভূমিকা পালন করছে।’ 
BBS cable ad