শরীয়তপুরের শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় সেজেছে বর্ণিল সাজে

রোমান আহমেদ আকন্দ, (শরীয়তপুর) :
কোভিডের কারণে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার সুযোগে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে বিদ্যালয় গুলো। অগ্রগামি এসব বিদ্যালয় দেখতে বিভিন্ন উপজেলার ঘুরতে আসছেন শিক্ষাকরা। ছাত্র ছাত্রীরাও বিদ্যালয়ে এসে আনন্দে আত্মহারা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যলয় সূত্র জানায়, গত অর্থ বছরের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লীপ, ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্ধের মাধ্যমে শরীয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলার শতাধিক বিদ্যালয়কে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। শিশুদের কাছে তাদের বিদ্যালয়কে আকর্ষণীয় করে তোলার লক্ষে স্ব স্ব বিদ্যালয় তাদের ম্যানেজিং কমিটির সহায়তায় এ কাজটি সম্পান্ন করেছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ মহিষার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামভদ্রপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডামুড্যা উপজেলার ইসলামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইকরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেউর ভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুতুবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিশাকুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নড়িয়া উপজেলার রোকন্দপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আনাখন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অত্যান্ত বর্নিল সাজে সেজেছে। বিদ্যালয়ের দেয়াল গুলোকে বিভিন্ন আলপনা, বর্নমালা, পশু পাখির ছবি একে আকর্ষনীয় করে সাজানো হয়েছে। স্কুল গুলোর চারপাশে বিভিন্ন ফলের গাছ রোপন করে চুনকামের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলো হয়েছে সৌন্দর্য। নানা প্রজাতির গাছে গাছে ছেঁয়ে আছে ছাদ বাগান। নানা শিক্ষা উপকরণ দিয়ে আকর্ষণীয় করে সাজানো হয়েছে প্রাক-প্রাথমিকের শ্রেণীকক্ষ।
কথা হয় বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সাথে। তানিয়া, লিমা, আফিফা, ইব্রাহীম, আতিকসহ উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীরা বলেন, আমাদের স্কুল অনেক সুন্দর। অন্য স্কুল থেকে অনেকেই দেখতে আসে আমাদের স্কুল। বন্ধের আগে এতো সুন্দুর ছিল না। বন্ধের পর স্কুলে এসে দেখি পাল্টে গেছে সব কিছু। আমরা স্কুলে এসে অনেক মজা পাই।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ মহিষার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লতা বলেন, যেই দিন এ বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি সেই দিন আমাকে বসতে দেয়ার একটি চেয়ারও ছিলনা। অনেকক্ষণ দাড়িয়ে ছিলাম। এরপর একটি বেঞ্চে বসেছি। পানি খেতে দিয়েছেল একটি ভাঙা গ্লাসে। সেইদিন মনে মানে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। বিদ্যায়টিকে নিয়ে আমি স্বপ্ন এঁেকছিলাম। আজ যখন বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষাকরা এ বিদ্যালয়টি দেখতে আসেন তখন আমি আবেগ-আপ্লুত হই। মনে হয় আমার প্রতিজ্ঞা কাজে লেগেছে। আমি স্বপ্ন ছুঁতে পেরেছি।
ডামুড্যা উপজেলার ইসলামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনুপম বলেন, আমর বিদ্যায়টি একটি রেজিষ্ট্রার্ড বিদ্যালয় ছিল। আমরা বছরের পর বছর বিনা বেতনে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দান করেছি। ভবন ছিলনা কোন রকম ভাঙ্গাচুড়া টিনের ঘরে পাঠদান করতাম। স্বপ্ন ছিল ভবন পেলে বিদ্যালয়টিকে একটি অগ্রগামী বিদ্যালয়ে রুপান্তর করতে চেষ্টা করবো। ২০১৯ সনের শেষ দিকে বিদ্যালয়ে ভবন নির্মান শেষে আমাদের হস্তান্তর করেছে। ভবন হাতে পাওয়ার পরেই কাজ শুরু করেছি। কোভিড পরিস্থিতিতেও প্রতিদিন বিদ্যালয়ে পড়ে থেকেছি। কিভাবে বিদ্যালয়টিকে শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষনীয় করে তোলা যায়। টিইও, এটিইও স্যারদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করেছি। এখনো আমাদের কাজ অব্যাহত রয়েছে।
ডামুড্যা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ফারুক আলম বলেন, আমাদের জেলা শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ স্যারের নেতৃত্বে শরীযতপুরের প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি পরিবর্তনের হাওয়া শুরু হয়েছে। গুগল মিটে অনলাইন পাঠ দানেও শরীয়তপুর জেলা প্রথম হয়েছে। কোভিডের এ সময়েও শিক্ষকদের আমরা অনলাইন পাঠদান, ওয়ার্ক সীট বিতরণসহ উর্দ্ধতণ কর্তৃপক্ষের সকল নির্দেশনা প্রতিপালনে কাজ করছি। সরকারী বরাদ্দ গুলো সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমারা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, শরীয়তপুরের শিক্ষকদের মান ভালো। নির্দেশনা দিলে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে। র্দীঘ বন্ধের সুযোগে অনেক গুলো বিদ্যালয়কে শিশুদের কাছে আর্কষনীয় করে তোলার জন্য কাজ করা হয়েছে। যে বিদ্যালয় গুলো এখনো পিছিয়ে রয়েছে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে অগ্রসর বিদ্যালয় গুলো পরিদর্শনের পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে তারা উদ্যোমী হয়।