South east bank ad

৩ ঘন্টার মধ্যেই হারিয়ে যাওয়া দুই শিশুকন্যাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিল কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ

 প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২১, ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন   |   জেলা পুলিশ

৩ ঘন্টার মধ্যেই হারিয়ে যাওয়া দুই শিশুকন্যাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিল কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ

মারিয়া (১০) ও ফারজানা( ৮) ৩ বছর পূর্বে মাতৃহারা দুই শিশু সন্তান, পড়াশোনা করে  যথাক্রমে তৃতীয় ও দ্বিতীয় শ্রেনীতে। সৎমায়ের সংসারে অনাদরে অবহেলায় বেড়ে উঠছে তারা, বাবা ফিরোজ চৌকিদার ২৭ বছর যাবৎ লেবার এর কাজ করছেন সদরঘাটে। কেরানীগঞ্জ  মডেল থানাধীন জিনজিরা ইউনিয়ন এর পূর্ব বন্দডাকপাড়ায় ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বাস করছেন পটুয়াখালীর বাউফলের স্হায়ী বাসিন্দা জনাব ফিরোজ।

গত ১৯/ ০৭/২০২১ ইং সকাল ৬টায় ঐ বাসা থেকে পাশ্ববর্তী স্কাউট ক্লাব জামে মসজিদ এ সেফারা শিখতে গিয়েছিল মারিয়া ও ফারজানা, সকাল ৭টা বাজলে ও ঐদিন ফিরে আসেনি তারা,যা আসেন অন্যদিন। 

অবুঝ শিশু সন্তানদের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন তাদের বাবা ফিরোজ, সময় গড়িয়ে তা রুপ নেয় উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও আশংকায়, ক্রমে এ  আশংকার পারদ উর্ধমুখী হতে থাকে।
সারাদিন ধরে আত্মীয় স্বজন ও বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নেন এই অসহায় বাবা। 

পরেরদিন ২০/০৭/২০২১ইং সকালে থানায় হাজির শোকাতুর পিতা  ফিরোজ, সবিস্তারে ঘটনাটি খুলে বলেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব আবু ছালাম, পিপিএম এর কাছে, এন্ট্রি করেন জিডি।ওসি মহোদয় কন্যাহারা পিতাকে অভয় দেন, আশ্বাস দেন হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের  ফিরিয়ে দেওয়ার এবং তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে। 

অফিসার ইনচার্জ আবু ছালাম, পিপিএম তাৎক্ষনিকভাবে বিষয়টি জানান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হোসেন সরদার বিপিএম, পিপিএম কে। অবগত করেন কেরানীগঞ্জ সার্কেল এর এডিশনাল এসপি শাহাবুদ্দিন কবিরকে। জিডি তদন্তের দায়িত্ব অর্পণ করেন এসআই সুব্রত দাসকে।

পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হোসেন সরদার বিপিএম, পিপিএম এর সার্বিক নির্দেশনায় বিষয়টি নেক টু নেক ক্লোজ তদারকি করে এগিয়ে যেতে থাকেন এডিশনাল এসপি মোঃ শাহাবুদ্দিন কবীর ও ওসি আবু ছালাম মিয়া, পিপিএম । একসময় এতে যুক্ত হন ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রমজানুল হক।

তদন্তকালে বিশ্বস্ত সোর্স ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হয়, একপর্যায়ে দুপুর ২টার দিকে  হারিয়ে যাওয়া মারিয়া ও ফারজানার হদিস পাওয়া যায় ঢাকা শহরের জুরাইনের মুরাদপুরস্হ মাদ্রাসা রোডের এক বাসায়। জানা যায় ঐ শিশুরা নিজেরাই সেখানে গিয়েছিল। জিডি এন্ট্রির ৩ ঘন্টার মধ্যেই হারিয়ে যাওয়া  দুই শিশু সন্তানকে ফিরে পান তাদের বাবা ফিরোজ। মুহুর্তেই শোকের নয়নজল যেন আনন্দ অশ্রুতে রুপান্তরিত হয়ে ধরা দেয় পিতা ফিরোজ এর নয়নে। এক অবিশ্বাস্য অভিব্যক্তি যেন ফিরোজ এর মুখায়ববে, অন্য রকম পুলিশ যেন দেখছেন তিনি।

উদ্ধার হওয়া শিশু মারিয়া ও ফারজানাকে নিয়ে আসা হয় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায়। এডিশনাল এসপি মোঃ শাহাবুদ্দিন কবীর ও ওসি আবু ছালাম মিয়া, পিপিএম শিশুদেরকে তাদের প্রিয় ক্যান্ডি দিয়ে আপ্যায়িত করেন, সবিস্তারে শুনেন তাদের দুঃখবেদনার বচন। মন খুলে শিশুরা তাদের মনের কথা বলেন এই দুই পুলিশ আংকেল এর কাছে, বলতে পেরে দুঃখভার যেন হালকা হল তাদের, পুলিশ আংকেলদের এমন ব্যবহারে আপ্লুত হন মা হারানো মারিয়া ও ফারজানা। 

এডিশনাল এসপি মোঃ  শাহাবুদ্দিন কবীর শিশু মারিয়া ও ফারজানাকে ঈদ উপহার হিসেবে নগদ অর্থ  তুলে দেন। ওসি আবু ছালাম চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, লবন, সেমাই, চিনি ইত্যাদি নানা সামগ্রীর সমাহার ঈদ উপহার হিসেবে তুলে দেন শিশুদেরকে। শিশু মারিয়া ও ফারজানাকে আশ্বাস দিয়ে যেকোন প্রয়োজনে তাদের কাছে আসার কথা বলেন এই পুলিশ কর্মকর্তারা। শিশুদের চোখে মুখে তখন খুশির বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস। 

হারিয়ে যাওয়া শিশু সন্তান মারিয়া ও ফারজানা এবং ঈদ উপহার সামগ্রী পেয়ে ঈদের আনন্দ ফিরে যেন আবার ফিরে আসল ফিরোজ এর পরিবারে, এ আনন্দের স্বাক্ষী থাকল কেরানীগঞ্জের পূর্ব  বন্দডাকপাড়ার আপামর মানুষজন। তাদের সম্মিলিত অভিমত এমন করিৎকর্মা পুলিশই  তো চায় জনগন,এরাই তো জনগনের পুলিশ।
BBS cable ad

জেলা পুলিশ এর আরও খবর: