South east bank ad

বনানীর সিগনেচার ও হেজ সিসা লাউঞ্জে অভিযান, তালাবদ্ধ অন্ধকার রুমে তরুণীদের সঙ্গে ছিল বিদেশিরাও

 প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ১০:২১ অপরাহ্ন   |   মেট্রোপলিটন পুলিশ

বনানীর সিগনেচার ও হেজ সিসা লাউঞ্জে অভিযান, তালাবদ্ধ অন্ধকার রুমে তরুণীদের সঙ্গে ছিল বিদেশিরাও

রাজধানীর বনানীর ১১ নম্বর সড়কে অবস্থিত ‘হেজ’ সিসা লাউঞ্জ। প্রতিদিন সূর্য ডুবে সন্ধ্যা লাগতেই আলো-আধারের খেলায় কমবয়সী তরুণ-তরুণী ও বিদেশিদের আনাগোনা বাড়তে থাকে সেখানে। যা চলে গভীররাত পর্যন্ত। পুরো শহর ঘুমিয়ে পড়লেও জমজমাট থাকে লাউঞ্জটি। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মিউজিক এবং ক্ষতিকর সিসার হুক্কার পাইপের টানে টানে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তরুণ-তরুণীরা।

গোয়েন্দা খবরে বনানীর সিসা লাউঞ্জে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর—ডিএনসি। অভিযানে তালাবদ্ধ কক্ষে শতাধিক তরুণ-তরুণীকে বেসামাল অবস্থায় দেখতে পান অভিযানে থাকা কর্মকর্তারা। যেখানে উপস্থিত ছিলেন— চলচ্চিত্র অঙ্গনের উঠতি মডেল ও অভিনেত্রীরাও। অভিযানে লাউঞ্জের একটি কক্ষে কয়েকজন বিদেশি নাগরিককে তরুণীদের নিয়ে সিসা সেবন করতে দেখা যায়।কর্মকর্তারা ওই কক্ষে প্রবেশ করলে তাদের ওপর চড়াও হন বিদেশি নাগরিকরা এবং ডিজিটাল এভিডেন্স সংগ্রহের সময় মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে জানা যায় তারা একটি দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তা। পরে আলোচনা ও কূটনৈতিক হস্তক্ষেপে তারা স্থান ত্যাগ করেন। এসময় সিসা লাউঞ্জ থেকে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গ্রেপ্তারকৃতরা ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির ১২ অংশীদারের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করা হয়েছে। 

আসামিরা হলেন— কাজী মোহাম্মদ সামি, নাজমুল সাকিল, চৌধুরী গোলাম আনাস, মোহাম্মদ আম্মার, মুফরাত হাসান ওরফে বান্টি, আল রহমান, সাদমান হোসেন, সাকিব হোসেন, সৈয়দ মুহাম্মদ তাহমিদ আহসান ও আহমেদ মোস্তফা ওরফে রাসেল। এদিন ঘটনাস্থল থেকে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম ওরফে জসিম এবং ইমরান হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাছাড়া হেজ লাউঞ্জ থেকে ২৬টি হুঁক্কা, সাত কেজি আমদানি নিষিদ্ধ সিসা ও বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়।

থানা পুলিশ ও ডিএনসি সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবারের বনানীর এই অভিযানে হেজ ছাড়াও সিগনেচার নামের আরও একটি সিসা লাউঞ্জে অভিযান চালিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। অভিযানে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) হাসান মারুফসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ সিসা, হুঁকা ও মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। দুটি সিসা লাউঞ্জ থেকে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সিগনেচার লাউঞ্জেও অভিযানে মেলে বিদেশি মদ: 

বনানীর ৫০ নম্বর বাড়ির ১৩ তলায় অবস্থিত ‘সিগনেচার লাউঞ্জে’ অভিযান চালিয়ে পাঁচ কেজি সিসা, ২০টি হুঁক্কা এবং বিদেশি মদের বোতল জব্দ করা হয়। অভিযানে স্বপন মিয়া, শাকিল, সিয়াম ও আব্দুর রায়হানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনায় তারেক জামিল নামের এক আসামি পলাতক রয়েছে।

সূত্র বলছে, সিসা বিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে অংশ নেন অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস) অতিরিক্ত ডিআইজি বশির আহমেদ, অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ বদরুদ্দীন, ঢাকা মেট্রো উত্তর ও দক্ষিণের উপপরিচালক শামীম আহমেদ ও মানজুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান এবং আব্দুল হামিদসহ ঊর্ধ্বতন প্রায় ৩৫ কর্মকর্তা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানের খবর পেয়ে বনানী ও গুলশান এলাকার মাদক ও অন্যান্য সিসা ব্যবসায়ীরা তড়িঘড়ি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে পালিয়ে যান।

অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘সিসায় দুই শতাংশের বেশি নিকোটিন পাওয়া গেলে তা আইন অনুযায়ী মাদক হিসেবে গণ্য হয়। অথচ এসব লাউঞ্জে উচ্চমাত্রার নিকোটিনযুক্ত সিসা পরিবেশন করা হয়, যা তরুণদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।’

ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক এ কে এম শওকত ইসলাম বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সিসা বিরোধী অভিযান চলছে। যেসব লাউঞ্জে নিয়মবহির্ভূত সিসা সেবন হয়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ সিসার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান— অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বলা আছে, শূন্য দশমিক ২ শতাংশের বেশি নিকোটিনযুক্ত যেকোনো তরল বা পানীয় ‘খ’ শ্রেণির মাদক। সিসা বিভিন্ন ধরনের ভেষজের নির্যাস সহযোগে ০.২ শতাংশের বেশি নিকোটিন এবং এসেন্স ক্যারামেল মিশ্রিত স্লাইস দিয়ে তৈরি। এটি বহন, সংরক্ষণ ও ক্রয়-বিক্রি করার অপরাধে একবছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর শাস্তির বিধান রয়েছে।

BBS cable ad

মেট্রোপলিটন পুলিশ এর আরও খবর: