কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারীর সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদ জানিয়েছে পুলিশ

গত ২২/০৬/২০২১ খ্রিঃ তারিখে কথিত সাংবাদিক ইফতেখার আহম্মেদ খান বাবু ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি, সেগুন বাগিচায় “ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ কর্তৃক হয়রানি ও বাড়ী ভাংচুরের প্রতিবাদ” শিরোনামে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেন “ঘোড়াঘাট থানার ওসি আজিম উদ্দিনের অনিয়ম এবং চাঁদাবাজীর তথ্য আমি ফেসবুকে ফাঁস করে দেয়ায় ৩০/১২/২০২০ খ্রিঃ তারিখ রাতের আঁধারে পুলিশ আমার বাড়ির তিনটি গেট ভেঙ্গে বাড়িতে প্রবেশ করে আমার স্ত্রীসহ আমাকে মারধর করে এবং আমার স্ত্রীকে টানা হেঁচড়া করে শ্লীলতাহানী করাসহ নগদ টাকা, স্বর্ণ, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, প্রাইভেটকার ও মোবাইল লুটপাট করে নিয়ে যায় এবং আমাকে থানায় নিয়ে গিয়ে ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে নির্যাতন করাসহ আমার বিরুদ্ধে মোট ০৯ টি মিথ্যা মামলা দেয়”। উক্ত সংবাদ সম্মেলনটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ঐ সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে যেসকল অভিযোগ উন্থাপন করেছেন সেগুলো সঠিক নয়। বরং তিনি নিজের অপকর্ম আড়াল করার উদ্দেশ্যে এবং সেগুলোর প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে পুলিশ কর্তৃক গৃহীত মামলা সমূহকে প্রভাবিত করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে ইফতেখার আহম্মেদ খান বাবু (৩৭) ঘোড়াঘাট থানা এলাকার একজন কথিত অনলাইন সাংবাদিক এবং ঘোড়াঘাট অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। ইফতেখার আহম্মেদ খান বাবু ও তার ছোট ভাই মোঃ ওয়াকার আহম্মেদ @ নান্নু (৩৬) দ্বয়ের বিরুদ্ধে ঘোড়াঘাট থানা এলাকায় চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসাসহ অনলাইনে মিথ্যা-বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করার হুমকি প্রদর্শনকারী হিসেবে পরিচিত। তারা ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিকতার নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েমসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। তাদের অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আড়াল করার অপকৌশল হিসাবে প্রশাসন ও পুলিশের বিরুদ্ধে তারা নামে-বেনামে দরখাস্ত দাখিলসহ ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে অনলাইনে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করে থাকতো। ফলে তাদের ভয়ে কেউ কোন প্রতিবাদ করার সাহস করতো না। ৩০/১২/২০২০ খ্রিঃ তারিখে পুলিশ ইফতেখার আহম্মেদ খান বাবুকে গ্রেফতার করার পর তাকে গ্রেফতার এবং তাদের অপকর্ম ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম সম্পর্কে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বহুল প্রচারিত বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
যদিও গত ২২/০৬/২০২১ খ্রিঃ তারিখে তার আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেছেন যে ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা ছিল না এবং গত ৩০/১২/২০২০ খ্রিঃ তারিখে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করার পর তার বিরুদ্ধে ৯ টি মামলা দেয়া হয়, কিন্তু থানার রেজিস্ট্রারপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ কর্তৃক গত ৩০/১২/২০২০ খ্রিঃ তারিখে তাকে গ্রেফতারের পূর্বে তার বিরুদ্ধে ০৩ টি মামলা (২০১৪ সালে ০১ টি প্রতারণামূলক আত্মসাৎ (সিআর) মামলা, ২০১৫ সালে ১ টি মারধরসহ চুরির (জিআর) মামলা এবং ২০১৯ সালে ০১ টি চাঁদাবাজির মামলা (সিআর) বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন) এবং ০১ টি গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী ছিল। গত ৩০/১২/২০২০ খ্রিঃ তারিখে ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ তাকে অসাধুভাবে চোরাই গাড়ী রাখার অপরাধে গ্রেফতার এবং তার প্রেক্ষিতে ১ টি মামলা দায়ের করলে স্থানীয় ভ‚ক্তভোগী যারা এতদিন তার অপকর্ম ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাননি, সে সব ভ‚ক্তভোগী জনসাধারণ বাদী হয়ে ঘোড়াঘাট থানায় আরো ০৯টি মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে মোট ১৩ টি মামলা এবং তার ছোট ভাই ওয়াকার আহম্মেদ @ নান্নু (৩৬) এর বিরুদ্ধে ০৭ টি মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য যে, গত ২১/১২/২০২০ খ্রিঃ তারিখে মাদকদ্রব্য সেবন করার অপরাধে ডোপ টেস্টের ভিত্তিতে তার ছোট ভাই ওয়াকার আহম্মেদ @ নান্নু (৩৬) কে ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ০১ (এক) বছর কারাদন্ড প্রদান করেন।
গত ৩০/১২/২০২০ খ্রিঃ তারিখে ঘোড়াঘাট থানার রাত্রিকালীন টহলদল মূলত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইফতেখার আহম্মেদ খান বাবুর হেফাজতে থাকা একটি চোরাই গাড়ী উদ্ধার অভিযানে যায়। অভিযান পরিচালনাকারী পুলিশ সদস্যগণ প্রথমে তাদের পরিচয় দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে চায় এবং বারংবার গেট খুলতে অনুরোধ করে। কিন্তু তিনি পুলিশের সাথে কথা বলতে ও গেট খুলতে অস্বীকৃতি জানান। পুলিশ গেট নক করতে থাকলে সে তার অপরাধ ও গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে বাড়ীর গেট না খুলে অপকৌশল হিসাবে ফেসবুক লাইভে এসে পুলিশের বিরুদ্ধে আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রচার করতে থাকে। পরবর্তিতে পুলিশ যথাযথ প্রক্রিয়া ও নিয়ম অনুসরণ করে তাকে গ্রেফতার করে এবং তার হেফাজতে থাকা চোরাই প্রাইভেট কারটি উদ্ধার করে। পুলিশ জব্দকৃত গাড়ীর কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি গাড়ীর মালিকানার স্বপক্ষে কোন প্রকার দলিল উপস্থাপন করতে পারেন নাই। পরবর্তিতে অনুসন্ধানে জানা যায় যে উক্ত গাড়ীর প্রকৃত মালিক জনৈক জান্নাতুল ফেরদৌস, স্বামী-নাসির উদ্দীন আহমেদ, সাং-রোড নং-২২, নুরজাহান রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি পুলিশ কর্তৃক টাকা-পয়সা, স্বর্ণলঙ্কারসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। অথচ প্রকৃতপক্ষে অভিযান পরিচালনাকারী পুলিশ সদস্যগণ যথাযথভাবে ফৌজদারী কার্যবিধি অনুসরণ করে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিসহ আসামী ইফতেখার আহম্মেদ খান বাবুর উপস্থিতিতে তল্লাশি কার্যক্রম সম্পন্ন করে এবং উপস্থিত স্বাক্ষীদের স্বাক্ষর গ্রহণপূর্বক উদ্ধারকৃত মালামালের জব্দ তালিকা তৈরী করে। উল্লেখ্য যে, স্থানীয় স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে উদ্ধারকৃত মালামালের জব্দ তালিকায় আসামী ইফতেখার আহম্মেদ খান বাবু নিজেও স্বাক্ষর করেছেন। অতএব থানা পুলিশ কর্তৃক টাকা-পয়সা, স্বর্ণ অলংকারসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার দাবি ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত। সাংবাদিক সম্মেলনে ইফতেখার আহম্মেদ খান বাবু তার লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করেন ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ থানার নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক এবং থানা চত্তরে বিল্ডিং নির্মানের জন্য স্থানীয় দোকানদারের নিকট হতে টাকা না দিয়ে মালামাল নিয়েছেন। অথচ প্রকৃতপক্ষে উক্ত নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক এবং থানা চত্তরের বিল্ডিং নির্মানের কাজসমূহ পুলিশ সদর দপ্তরের বরাদ্দকৃত বাজেট থেকে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি মিথ্যাচারীতা করেছেন।
অন্যান্য পেশার পাশাপাশি পুলিশ এবং সাংবাদিকতার মতো দুটো মহৎ পেশা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিকালে দায়িত্ব পালনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই দুটি মহৎ পেশার আস্থার জায়গা হতে দিনাজপুর জেলা পুলিশ সাংবাদিক ভাইদের প্রতি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য প্রচারে আরো সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে। ভবিষ্যতে যে কোন মাধ্যমে এ ধরনের মিথ্যা ও মানহানিকর সংবাদ প্রচারে সাংবাদিক ভাইয়েরা আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।