ব্যাংক থেকে তোলা গ্রাহকের চুরি হওয়া ১৩ লাখ টাকা উদ্ধার

বিডিএফএন লাইভ.কম
ফরিদপুরে সোনালী ব্যাংক থেকে এক গ্রাহকের চুরি হওয়া ২০ লাখ টাকার মধ্য ১৩ লাখ টাকা ৩৭ দিন পর উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ চুরির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার (১৬ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় পুলিশ। দুপুর ১টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়েয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জামাল পাশা।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর সদরের বিলমামুদপুর এলাকার নূর মোহাম্মাদ ডাঙ্গী মহল্লার বাসিন্দা মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (৪২) বাবার পেনশনের সঞ্চিত ২০ লাখ টাকা ফরিদপুর হেড পোস্ট অফিস থেকে তুলে পাশেই সোনালী ব্যাংক কোর্ট বিল্ডিং শাখায় সঞ্চয়পত্রের জমা রাখার জন্য যান।
তিনি ম্যানেজারের কক্ষে সোফা সেট এর ওপর টাকার ব্যাগটি রাখেন। ম্যানেজার টাকা জমা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে, বললে তিনি কথা বলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ডেস্কে যান। এই ফাঁকে মাত্র এক মিনিটের মধ্যে অজ্ঞাতনামা চোরেরা উক্ত ২০ লাখ টাকার ব্যাগটি চুরি করে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে গত ৭ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম
মামলার বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় একটি মামলাদায়ের করেন।
যে দুইজনকে ২০ লাখ টাকা চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলেন, খুলনার হরিণঘাটা উপজেলার হোগলাডাঙ্গা গ্রামের মো. ফারুক শেখ (৬০) ও মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কোলা গ্রামের মোহাম্মদ আলী (৪৫)।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম হাসান তদন্ত কালে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে এবং আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ৩ জন আসামিকে শনাক্ত করেন।
পরে গত ১৫ মার্চ ভোর পাঁচটার দিকে খুলনার হোগলাডাঙ্গা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে মো. ফারুক শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় ফারুকের কাছ থেকে চুরি যাওয়া নগদ ৩ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে ফারুকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ওইদিন বেলা ১১টার দিকে মুন্সিগঞ্জ এলাকায় শ্বশুর বাড়ি থেকে মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর মোহাম্মদ আলীর স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে তার নিকট হইতে চুরি যাওয়া নগদ ৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে।
পরবর্তীতে ২ জন আসামির দেওয়া তথ্যমতে বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার উত্তর চাঁদসিরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।
কিন্তু তৃতীয় আসামি বাসা থেকে আগেই পালিয়ে যার। পরে তার বাসা থেকে চুরি হওয়া আরো নগদ ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জনা যায় আসামিরা দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে জড়িত। তারা ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়নগঞ্জ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চুরি করে থাকে।
মূলত আসামিরা সরকারি পোস্টো অফিস, ব্যাংকে বয়স্ক লোকদের টার্গেট করে থাকে। আসামিদের বিরুদ্ধে একই ধরনের অপরাধে গাইবান্ধা জেলাসহ বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, এই ঘটনায় সর্বমোট ৪ জন জড়িত ছিল। সকলকেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে এবং বাকি দুইজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
সংবাদ সম্মেলনে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলা হয়, বাকি দুই ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করা গেলে দতাদের কাছ থেকে বাকি সাত লাখ টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার, ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীম হাসান উপস্থিত ছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীম হাসান বলেন, বুধবার বিকেলে ২০ লাখ টাকা চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া মো. ফারুক শেখ ও মোহাম্মদ আলী ফরিদপুরের এক নম্বর আমলি আদালতের জিুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রে মো. শফিকুল রমহানের নিকট দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালতের নির্দেশে তাদের জেল হাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।