উন্নয়ন টেকসই করার জন্য প্রণোদনা-ভিত্তিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্যাকেজের আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সরকারী সফরে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ড. মোমেন এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় থাকা দেশগুলোর উন্নয়ন টেকসই করার জন্য প্রণোদনা-ভিত্তিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্যাকেজের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এর গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রভাব এবং এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) হিসেবে প্রাপ্ত বিশেষ সুবিধাদি হারানোর কারণে এসব দেশ পিছিয়ে পড়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এলডিসির উত্তরণে উন্নয়নের গতিপথে রাজনৈতিক দূরদর্শিতাকে চাবিকাঠি হিসাবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মুখে থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের অভিযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য উন্নয়ন নীতিমালা বিষয়ক জাতিসংঘ কমিটির সুপারিশটি সমগ্র জাতির জন্য একটি স্মরণীয় উপলক্ষ যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী একই সময়ে উদযাপন করা হচ্ছে।
উত্তরণের পথে থাকা ও উত্তরণ-হওয়া দেশসমূহ যেসব বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিরাপদে ও সাশ্রয়ী মূল্যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রাপ্তি এখন এলডিসির শীর্ষ অগ্রাধিকার হিসাবে চিহ্নিত করেন। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে রূপান্তর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশনের ভিত্তিতে বাংলাদেশের উত্তরণ পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে। মোমেন বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিপ্লব বাংলাদেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার পথ সুগম করেছে।এই সমস্যার সর্বাধিক কার্যকর সমাধান হলো ভ্যাকসিন উৎপাদন সক্ষমতা অর্জনে এলডিসি’র প্রযুক্তি ও বাস্তব জ্ঞান হস্তান্তরে টিআরআইপি’র ছাড় সুবিধা কাজে লাগানো। তিনি উন্নয়ন সহযোগী ও ভ্যাকসিন উৎপাদকদের এ ক্ষেত্রে সহায়তা বাড়াতে অনুরোধ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিউইয়র্কে ‘এলডিসি দেশগুলোর টেকসই ও অপরিবর্তনীয় উত্তরণে সক্ষমতা বিনির্মাণ’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে কি-নোট বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন। কানাডার স্থায়ী মিশন, এলডিসি বিষয়ক জাতিসংঘের উচ্চ প্রতিনিধি দফতর, ভূমিবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশসমূহ এবং উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহ (ওএইচআরএলএস)-এর সহযোগিতায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মোমেন বলেন, বেশিরভাগ এলডিসি’র ধকল সামলানোর জন্য আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং উত্তর-পূর্ব বীমা প্রকল্পের অভাব রয়েছে, যা তাদের উত্তরণের পথকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জপূর্ণ করে তুলেছে।
উত্তরণ প্রত্যাশার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এলডিসিগুলোর পর্যাপ্ত অর্থায়ন ও সম্পদ-সংস্থানের ওপর গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ভৌত ও প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে মারাত্মক ঘাটতি নিরসনে এলডিসি’র বর্ধিত অর্থায়ন সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি উত্তরণ-পরবর্তী ধাপে এলডিসি’র ডিএফকিউএফ বাজারে প্রবেশের সুবিধা লাভের দৃঢ় অঙ্গীকারের সঙ্গে রফতানি বৈচিত্র উৎসাহিত করার, দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষতা উন্নয়ন, অভিবাসীদের সামাজিক সুরক্ষা বৃদ্ধি, মনিটরিং এবং সহায়তা ব্যবস্থা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা এবং কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রবার্ট রাই অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন। তারা এলডিসি সম্পর্কিত জাতিসংঘের ৫ম সম্মেলনের প্রস্ততি কমিটির সহ-সভাপতি। মালাবির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং এলডিসি’র গ্লোবাল কো-অর্ডিনেশন ব্যুরোর চেয়ার আইজেনহওয়ার এমকাকা অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য রাখেন।