South east bank ad

প্রতি মাসে থানায় চার হাজারের বেশি মাদক মামলা

 প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ০৪:১৪ অপরাহ্ন   |   পুলিশ

প্রতি মাসে থানায় চার হাজারের বেশি মাদক মামলা

সারা দেশে মাদক ব্যবসা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ। মাদক ব্যবসায়ীরা এতই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর চড়াও হতেও পিছপা হচ্ছে না। মাদকের টাকা জোগাড়ে মাদকাসক্তরা বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে।
এমনকি আপনজনকে খুন করতেও দ্বিধা করছে না।

পুলিশ বলছে, পরিবহনসংকটসহ আরো কিছু সমস্যার কারণে এখন টহলের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে দেশে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ঢুকছে। এতে মাদক কেনাবেচা বেড়ে গেছে।

সম্প্রতি অভিযানে যাওয়া পুলিশের ওপর মাদক ব্যবসায়ীদের হামলার ঘটনা ঘটে। আদালতের নির্দেশ পেয়ে পরোয়ানোভুক্ত আসামি ধরতে মিরপুর ১১ নম্বরের খিচুড়িপট্টি বস্তিতে বাপ্পী নামের এক মাদক অপরাধীকে ধরত যায় পুলিশ। এ সময় একদল মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে বাশার নামের এক কনস্টেবলকে মারধর করে হাতকড়াসহ ওই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় মাদক ব্যবসায়ীরা।

গত ৭ এপ্রিল রাজধানীর পল্লবী থানা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে জানিয়ে গতকাল পল্লবী থানার ওসি তদন্ত আবুল কাইয়ুম কালের কণ্ঠকে বলেন, হাতকড়াসহ পালানো ওই মাদক ব্যবসায়ী এখনো ধরা পড়েনি।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশের এক সদস্যকে মারধর করে মাদক বিক্রেতারা। এক পর্যায়ে তারা পুলিশকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের সহযোগীদের ছিনিয়ে নেয়।

পুলিশের ওপর হামলার বিষয়ে তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন বলেন, ‘মাদক বিক্রেতাদের ধরতে আমাদের তিনজন পুলিশ সদস্য সেখানে গিয়েছিলেন। এ সময় অস্ত্রধারী এক মাদক ব্যবসায়ীকে ধরার পর তার সহযোগী অন্যরা পুলিশকে ঘিরে ধরে।
আমাদের ফোর্স কম থাকার সুযোগে এক পর্যায়ে তারা ওই মাদক কারবারিকে ছিনিয়ে নেয়।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তিনি বলেছেন, ‘এখন গ্রামগঞ্জেও মাদক ঢুকে গেছে। দেশে খুনসহ সামাজিক অপরাধমূলক ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে মাদকের প্রভাব। মাদক কমাতে পারলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে।’ গত শনিবার দুপুরে মোংলায় কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের সদর দপ্তরে বোট ওয়ার্কশপ ও স্লিপওয়ের নামফলক উন্মোচন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

সর্বশেষ গত বুধবার রাজধানীর পল্লবীতে নাজমুল হাসান পাপ্পু ও দোলনা আক্তার দোলা নামের দম্পতি নিজ বাসায় খুন হয়েছেন। পল্লবী থানার ওসি শফিউল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় গাউস মিয়া নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি মাদকাসক্ত বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।

গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর দক্ষিণখানের শাহ কবীর মাজার রোডের রাস্তায় প্রকাশ্যে স্ত্রী শিল্পী বেগমকে কেটে গলা কেটে হত্যা করেন স্বামী মো. তুহিন (৩২)। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর জানা যায় তিনি মাদক সেবন করেন। গতকাল দক্ষিণখান থানার ওসি মো. তাইফুর রহমান মির্জা এ তথ্য দেন।

গত বুধবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ফাজরাবাদ এলাকায় গভীর রাতে মাদকসেবী কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় একই পরিবারের সাতজন জখম হয়। পরে পুলিশ তাদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে, তারা সেই রাতে সবাই মাদক সেবন করে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, সমাজে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। প্রকাশ্যে বিক্রি হওয়া ইয়াবা, হেরোইনসহ অন্যান্য মাদকের প্রভাবে দেশে অপরাধ যাতে বাড়তে না পারে, সেদিকে তাদের নজরদারি রয়েছে। চলতি বছরের গত চার মাসে দেশের বিভিন্ন থানায় ১৬ হাজার ৪৮৫টি মাদকদ্রব্যসংক্রান্ত মামলা হয়েছে। সেই হিসাবে প্রতি মাসে চার হাজার ১২১.২৫টি মামলা হয়।

সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র বলছে, এসব মামলার বেশির ভাগ আসামি মাঠ পর্যায়ের মাদক বিক্রেতা। এসব মাদক ব্যবসায়ীর অনেকে গ্রেপ্তার হলেও আড়ালে থাকা শীর্ষ কারবারিরা ধড়া পড়ছে না। তাদের নিয়ন্ত্রণে দেশে মাদক ব্যবসা বাড়ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, চলমান বিশেষ অভিযানে মাদকের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে পুলিশের পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) হিসাব অনুযায়ী, দেশে মাদকসেবী প্রায় দেড় কোটি। এর মধ্যে এক কোটি মাদকাসক্ত এবং বাকি ৫০ লাখ মাঝেমধ্যে মাদক সেবন করে। এই হিসাবে দেশে প্রায় ১৭ কোটি ১৫ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে গড়ে প্রতি ১২ জনে একজন মাদকসেবী।

সংস্থাটির তথ্য মতে, দেশে মাদকাসক্তদের ৮০ শতাংশ কিশোর-তরুণ। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাদকাসক্তদের ৩০ শতাংশ শুধু নেশার খরচ জোগাতে অপরাধ ও অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে।

বর্তমানে মাদকাসক্তদের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে এক কোটির বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ইয়াবায় আসক্তি ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। দেশ মাদক পরিস্থিতি নিয়ে এর আগে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ পুরুষ ও ১৬ শতাংশ নারী। বেসরকারি আহসান উল্লাহ নারী মাদক নিরাময় কেন্দ্রের তথ্য বলছে, তাদের মাদক নিরাময় কেন্দ্রে এখনো অর্ধশতাধিক নারী মাদকাসক্ত আছে।

বিজিবির তথ্য বলছে, গত বছর তাদের অভিযানে সীমান্ত থেকে ১২ লাখ ৬১ হাজার ৪৬৭ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১২ কেজি ৯১৩ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস, সাত কেজি ৩৫ গ্রাম হেরোইন, ১৫ হাজার ৭৩৭ বোতল ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়।

মাদকের টাকা না পেয়ে আপনজনকে হত্যা : গত ১৩ মে ফেনীর ছাগলনাইয়ায় লায়লা বেগম নামের এক নারীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ তথ্য জানিয়ে ছাগলনাইয়া থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এ খুনের ঘটনায় ছেলে মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, মাদকের টাকা না পেয়ে মামুন তার মাকে খুন করে। গত ১২ মে বগুড়ার ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নে মাদক কেনার টাকা না পেয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ ওঠে ছেলের বিরুদ্ধে। ধুনট থানার ওসি সাইদুল আলম এ তথ্য দেন। গত ৫ এপ্রিল বরগুনার আমতলীতে মাদকের টাকা না পেয়ে পলি বেগম নামের এক গৃহবধূকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে তাঁর স্বামী সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে।

BBS cable ad