জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অজ্ঞাত শহীদদের মরদেহ উত্তোলন: পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার ঘোষণা সিআইডি প্রধানের
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-এর নেতৃত্বে জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানে অজ্ঞাত পরিচয়ে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী গোরস্থান সংলগ্নে সমাধিস্থ শহীদদের মরদেহ উত্তোলন ও পরিচয় উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানের একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি জনাব মো. ছিবগাত উল্লাহ, বিপিএম, পিপিএম আনুষ্ঠানিকভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের সূচনা করেন।
সম্ভাব্য কতিপয় স্বজনদের উপস্থিতিতে গম্ভীর পরিবেশে সিআইডি প্রধান তার বক্তব্যে বলেন: “শহীদদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। তাদের পরিচয় উদ্ঘাটন জাতির কাছে আমাদের দায়িত্ব। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে পোস্টমর্টেম, ডিএনএ স্যাম্পলিংসহ প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করা হবে। পরিচয় নিশ্চিত হলে ধর্মীয় মর্যাদা বজায় রেখে পুনঃদাফন করা হবে।” তিনি আরও জানান, মৃতদেহগুলো উত্তোলন শেষে ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হবে। স্বজনদের জন্য সিআইডি হটলাইনের মাধ্যমে ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহের ডেস্কও চালু করা হয়েছে।
সিআইডির ফরেনসিক ও ক্রাইম সিন ইউনিট, মেডিকেল কলেজের বিশেষজ্ঞ, ডিএমপি, সিটি করপোরেশন, ঢাকা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট, মানবাধিকার সংস্থা, জুলাই ফাউন্ডেশন, এবং জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল সমন্বিতভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতিটি ধাপ আন্তর্জাতিক মিনেসোটা প্রোটোকল মেনে অনুসৃত হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে:
* সাইট চিহ্নিতকরণ ও নিরাপত্তা জোন তৈরি
* ধর্মীয় প্রতিনিধিদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ
* ফরেনসিক ফটোগ্রাফি ও ম্যাপিং
* চেইন অব কাস্টডি অনুযায়ী নথিভুক্ত মরদেহ উত্তোলন
* হাড়/টিস্যু স্যাম্পল সংগ্রহ, প্যাকেজিং, লেবেলিং ও সিলিং
* আন্তর্জাতিক মানের ডিএনএ বিশ্লেষণ ও প্রোফাইলিং
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার সহায়তায় আর্জেন্টিনার খ্যাতনামা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ড. লুইস ফন্ডিব্রাইডারের নেতৃত্বে প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হচ্ছে। তার রয়েছে বিশ্বের ৬৫টি দেশে চার দশকের অভিজ্ঞতা। প্রকৃতপক্ষে এ কর্মযজ্ঞটি শুরু হয়েছে বহু আগে—পৃথিবীখ্যাত ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও জাতিসংঘের স্পেশাল রেপোরটেয়ার মি. মরিস টিড-বোল বিন্জের নেতৃত্বে জুলাইতে অনুষ্ঠিত সিআইডির এক কর্মশালার মধ্য দিয়ে।
কবরস্থানে উপস্থিত স্বজনদের অনেকেই তাঁদের প্রিয়জনের ছবি হাতে নিয়ে কান্না করছিলেন। অনেকের আশা, ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের মাধ্যমে তারা অবশেষে প্রিয়জনের পরিচয় জানতে পারবেন। মরদেহ উত্তোলন, শনাক্তকরণ ও পুনঃদাফনের পুরো প্রক্রিয়া ধর্মীয় সম্মান এবং আন্তর্জাতিক ফরেনসিক মানদণ্ড মেনে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিটি মরদেহের জন্য আলাদা কেস ফাইল তৈরি করা হচ্ছে, যা ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে।
সিআইডি স্বজনদের আহ্বান জানিয়েছে দ্রুত আবেদন করার জন্য, যাতে সকল শহীদের পরিচয় উদ্ঘাটনের এই মহৎ কাজে তারা অংশ নিতে পারেন।


