বিলসের সংবাদ সম্মেলন : করোনার সময় গৃহশ্রমিকের মজুরি কমেছে

কভিডকালে ২৮.২ শতাংশ গৃহশ্রমিকের বেতন কমেছে। ঢাকা শহরে কর্মরত গৃহশ্রমিকদের ওপর চলতি বছর করা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) পরিচালিত এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল রোববার ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর প্রেস ক্লাবে বিলস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিলসের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নইমুল আহসান জুয়েল। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী আবুল হোসাইন, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের প্রকল্প সমন্বয়কারী গীতা রানী অধিকারী, গবেষণা পরিচালনাকারী টিমের প্রধান জাকির হোসেন খান প্রমুখ।
‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি বাস্তবায়ন নিরীক্ষা এবং উওরণের উপায়’ শীর্ষক এ সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ ছিলেন অনাবাসিক (লিভ আউট)। ৪০ শতাংশ আবাসিক (লিভ ইন) গৃহশ্রমিক। সমীক্ষায় দেখা গেছে, গৃহশ্রমিকদের গড় মজুরি প্রতি মাসে ৪ হাজার ৫০০ টাকার কিছু বেশি। এদের মধ্যে ৯০ শতাংশই ৭ হাজার টাকার কম মজুরি পেয়ে থাকেন। তবে যেসব গৃহশ্রমিকের কারিগরি প্রশিক্ষণ রয়েছে, তাদের গড় আয় অপ্রশিক্ষিতদের তুলনায় ভালো।
অক্সফাম ইন বাংলাদেশ ও গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার সহায়তায় ‘সুনীতি’ প্রকল্পের আওতায় ২৮৭ জন গৃহশ্রমিকের ওপর এ সমীক্ষা চালানো হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নকারি অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে রয়েছে গণসাক্ষরতা অভিযান, হ্যালোটাস্ক, নারী মৈত্রী, রেড অরেঞ্জ ও ইউসেপ বাংলাদেশ। সমীক্ষায় দেখা যায়, নিয়োগকারীর সঙ্গে কোনো লিখিত চুক্তি নেই ৯৯ শতাংশের বেশি গৃহশ্রমিকের। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই। সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটিরও ব্যবস্থা নেই।
গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫-এ নিয়োগকর্তা, কর্মচারী এবং সরকারের দায়িত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট সংজ্ঞাসহ ১৬টি বিধান রয়েছে। তবে সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ১৪ শতাংশ গৃহশ্রমিক সরকার ঘোষিত এ নীতি সম্পর্কে জানেন এবং তাদের নিয়োগকারীরা এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
সমীক্ষা সম্পর্কে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আবাসিক গৃহশ্রমিকদের মধ্যে ৩৮.৬ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের নিচে। ৭২.২ শতাংশ গৃহশ্রমিকের মজুরি কাজের ধরনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। এছাড়া কর্মঘণ্টার ওপর ভিত্তি করে ৬.১ শতাংশের এবং তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ৮.১ শতাংশের মজুরি নির্ধারিত হয়ে থাকে। আবাসিক গৃহশ্রমিকদের মধ্যে ২০ শতাংশের মজুরি পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। আবার আবাসিক গৃহশ্রমিকদের মধ্যে ১৩.৬ শতাংশ কোনো মজুরি পান না। তারা শুধু থাকা ও খাওয়ার বিনিময়ে শ্রম দিয়ে থাকেন।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৬৪ শতাংশ গৃহশ্রমিকের কোনো সাপ্তাহিক বা মাসিক ছুটি নেই বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। অন্তত ৩১.৫৮ শতাংশ আবাসিক এবং ৩৬.৪২ শতাংশ অনাবাসিক গৃহশ্রমিক বলেছেন, তাদের শারীরিক ও মানসিক চাপ নিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জবরদস্তিমূলক শ্রম দিতে হয়েছে। আবাসিক গৃহশ্রমিকদের ৪১.২৩ শতাংশ এবং অনাবাসিকদের ২৪.৮৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা গালিগালাজের শিকার হয়েছেন। আর ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স, তাদের ৫০ শতাংশই কোনো না কোনো ধরনের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
এদিকে বিলসের সংবাদ সম্মেলন থেকে গৃহশ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়।