South east bank ad

শরীয়তপুরে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা

 প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:২৭ অপরাহ্ন   |   সারাদেশ

শরীয়তপুরে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি:

চলছে শরৎকাল। আর কয়েকদিন পরেই শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব দূর্গাপূজা। মৃত্তিকা শিল্পীরা (কুমার) ব্যস্ত প্রতিমা তৈরির কাজে। এছাড়াও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখেও ব্যস্ত সময় পার করে তারা। কারণ, গ্রামগঞ্জে বসে বৈশাখী মেলা। আর মেলা মানেই হাতে তৈরি মাটির খেলনা। সবকিছু মিলিয়ে  শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুর পালপাড়ার কুমার পল্লীর মৃৎশিল্পীদের কর্মচাঞ্চল্য বেড়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কার্তিকপুর পালপাড়ার কুমার পল্লীতে মাটির তৈরির এসব পণ্য তৈরির পর রোদে শুকানো, আগুনে পোড়ানো এবং রঙ করার প্রস্তুতি চলছে। তবে মাটি, জ্বালানি, শ্রমিকসহ সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না মৃৎশিল্পী। তারপরেও বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখতে তারা নতুন নতুন পণ্য তৈরি করে যাচ্ছে। মানুষের সভ্যতার আদি ও ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প বিলুপ্ত প্রায় তার পরেও এ পেশাকে টিকিয়ে রাখার জন্য কম বেশি প্রায় ১২ মাসই কাজ করে যাচ্ছে এই শিল্পীরা।


জানা গেছে, শরীয়তপুরের ছয় উপজেলায় কম বেশি মৃৎশিল্প (কুমার শিল্প) তৈরির প্রচলন ছিল। কালের প্রবর্তনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সে মৃৎশিল্প। বর্তমানে ধাতব তৈজসপত্র বাজারে সহজলভ্য হওয়ায় মাটির তৈজসপত্রের চাহিদা কমে গেছে।জেলার সদর উপজেলার গ্রাম চিকন্দী, কোটাপাড়া, কালি খোলা, গঙানগর, ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুর, ডামুড্যা উপজেলার কাইলারা এলাকাগুলো মৃৎশিল্পের (কুমার শিল্প)  প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি। জেলার মৃৎশিল্প (কুমার শিল্প) ব্যবসায়ীরা জানান, এক সময় নিজেদের জমি থেকে মাটি তুলে এ শিল্পে ব্যবহার করা হতো। আর এখন অন্য জায়গা থেকে মাটি কিনে এনে বানাতে হয়। তাছাড়া মাটির দামও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তারা আরো জানান, বাজারে প্লাস্টিক, সিরামিক, মেলামাইন, সিলভার, এমনকি লোহার তৈরি সামগ্রীর সহজলভ্যতা, কম দামের কারণে মানুষ মৃৎশিল্প (কুমার শিল্প) ব্যবহারে অনীহা দেখায়। ফলে শিল্পীরা তাদের উৎপাদনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। 

এ ব্যাপারে কার্তিক পুরের পাল পাড়ার ডিজাইনার রূপক পাল বলেন, আমার মৃৎশিল্পটি ৩৩ বৎসর যাবত কাজ করে চালিয়ে রাখছি। তবে সফলতা ও পেয়েছি আমি বাংলাদেশ থেকে একটি কোম্পানি আড়ং এর মাধ্যমে আমার এ মাটির তৈরিপণ্য বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর লাভবান হয়েছি। সারা বৎসর আমার এই মৃৎশিল্পের তৈরিপণ্য বিদেশে রপ্তানির জন্য অর্ডার পেয়ে থাকি। কিন্তু আমি চাই আমার এই শিল্পটি আরো বড় হোক যাতে করে আমি সরাসরি দেশের বাহিরের বিক্রি করতে পারি। আমাদের দেশের অনেক বেকার লোকের কর্মস্থান করতে পারি। আর এটাই আমার উদ্দেশ্য।

অন্যদিকে, কোটাপাড়ার মৃৎশিল্পের কারিগর রবিন্দ্র পাল বলেন, এ  পেশায় আয় কম। আমার ছোট ভাই লক্ষণ পাল আগে কুমারের কাজ করতো। কুমারের কাজে আয় কম, সংসার চলে না তাই এখন অন্য পেশা বেছে নিয়েছে। সরকার সহযোগিতা করলে একটু ভালো থাকতে পারতাম।

ডামুড্যা উপজেলার কাইলারা মৃৎশিল্পী (কুমার শিল্প)  হরিদাস পাল বলেন, এ ব্যবসায় এখন আর সংসার চলে না। যা আয় হয় তা দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে সংসার চালাতে হয়। বাপ-ঠাকুরদার পেশা ছাড়তে পারছি না। তাই এ শিল্প নিয়েই পড়ে আছি।

এ ব্যাপারে রামভদ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিপ্লব সিকদার বলেন, আমাদের কার্তিকপুর পালপাড়ার মৃৎশিল্পের তৈরি জিনিসপত্র এখন ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়।

এ ব্যাপারে ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আল নাসীফ বলেন, ভেদরগঞ্জ উপজেলার মৃৎশিল্পকে একটা মাস্টার প্লানের মাধ্যমে এনে বহিঃবিশ্বে তাদেরকে আরও পরিচিতি করার জন্যে যা যা করনি তা আমরা করছি। ইতিমধ্যে আমরা জেলা ব্র্যান্ডিং এর আওতায় এ মৃৎশিল্পকে এনেছি এবং আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আর্কষণ করছি। যাতে করে আরও আধুনিকায়ন করা যায়।
BBS cable ad