South east bank ad

কাস্টমসের মূল কাজ বৈধ ব্যবসার সহজীকরণ

 প্রকাশ: ৩১ মে ২০২১, ০৬:০৭ অপরাহ্ন   |   কাস্টমস

কাস্টমসের মূল কাজ বৈধ ব্যবসার সহজীকরণ


কাস্টমস হচ্ছে একটি দেশের সার্বভৌমত্ব চর্চার অন্যতম প্রতীক। এই কাস্টমসের মাধ্যমে কোনো দেশের সীমানায় বৈধভাবে কোনো লোক যাতায়াতের বা কোনো পণ্যের গমনাগমন সম্পন্ন হয়। মূলত বিমানবন্দর, সমুদ্র, স্থলবন্দর ও নদীবন্দরসমূহে কাস্টমসের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ দায়িত্বটি পালন করার জন্য স্ব-স্ব দেশের কাস্টমস এজেন্সি নিয়োজিত থাকে। বাংলাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন বাংলাদেশ কাস্টমস বিভাগ এই গুরুদায়িত্বটি পালন করছে।

কাস্টমসের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে স্থানীয় আইন এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন চুক্তি সীমান্ত বন্দরসমূহে প্রয়োগ করা। এর মাধ্যমে বাণিজ্য সহজীকরণ এবং যাত্রীদের গমনাগমনে দ্রুততর সেবা মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। কম সময়ে এবং সহজ আনুষ্ঠানিকতায় বৈধ পণ্যটি দেশে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত করা এবং তাদের খরচ যেন কমে যায় সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা। এতে কম দামে পণ্য ক্রেতার নিকট পৌঁছায়। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে অর্থায়নের জন্য কাস্টমস সরকারকে বড় অঙ্কের অর্থ জোগান দেয়। বর্তমানে প্রায় ২৪ শতাংশ কাস্টমস থেকে আহরিত হয়। একই সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা, পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কাস্টমস ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে বাণিজ্যভিত্তিক মানি লন্ডারিং এবং চোরাচালান প্রতিরোধে কাস্টমসের কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়েছে। ফলে সত্ ব্যবসায়ীরা উত্সাহিত হচ্ছেন। অধিকন্তু বিভিন্ন ধরনের শুল্ককর হ্রাস-বৃদ্ধি করে দেশের সাধারণ লোকের ভোগ্য পণ্য সহজলভ্য করা হচ্ছে। অতি বিলাসবহুল পণ্যের ওপর অধিক হারে শুল্ককর আরোপ করে তা নিরুত্সাহ করা হচ্ছে। এতে ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় কাস্টমস অবদান রাখছে।


আধুনিক কাস্টমস মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে থেকে গড়ে উঠেছে। ১৯৫৩ সালে প্রথম কাস্টমস কো-অপারেশন কাউন্সিল (সিসিসি) গঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশ এর সদস্য ভুক্ত হয় এবং বিশ্বব্যাপী অভিন্ন কাস্টমস ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৯৪ সালে এ সংস্থাটি ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন নামে রূপ লাভ করে। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৮২টি। এই সংস্থার উদ্যোগে কাস্টমস শুধু রাজস্ব আহরণে সীমিত থাকেনি। স্ব-স্ব ব্যবস্থায় জনগণের জীবনমান উন্নয়নে বাণিজ্য সহজীকরণ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখে। দেশের নিরাপত্তা, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে। বাংলাদেশ এই সংস্থার সব চুক্তি বাস্তবায়ন করছে এবং আধুনিকায়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এর মধ্যে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো, পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট, এনইপি, এনআইআইসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে এবং এর সুফল এই মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। সত্ ব্যবসায়ীদের সময় ও খরচ কমানোর ক্ষেত্রে কাস্টমসে আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নততর ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য বর্তমানে এনবিআর অত্যন্ত আন্তরিক।


কাস্টমসের মূল কাজ হচ্ছে বৈধ ব্যবসায় সহজীকরণ করা। আমার অভিজ্ঞতা বলছে, কেউ কেউ এই সহজীকরণের অপব্যবহার করে অবৈধ পণ্য পরিবহনের সঙ্গে জড়িত থাকেন। বাংলাদেশ কাস্টমস এসব চোরাচালানি পণ্য আটকাতে অত্যন্ত তত্পর রয়েছে। বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার এবং কার্যকর নেটওয়ার্ক তৈরি করে বাংলাদেশ কাস্টমসের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যথাযথ নেতৃত্বের মাধ্যমে গোয়েন্দানির্ভর তথ্য কাজে লাগিয়ে স্বর্ণ, মুদ্রা, মাদকদ্রব্যসহ অন্যান্য অবৈধ পণ্যের চোরাচালান প্রতিরোধে কাস্টমস তার সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৩-১৮ পর্যন্ত শুল্ক গোয়েন্দা প্রায় ৫২ মণ অবৈধ স্বর্ণ (যার আর্থিক মূল্য ১০০০ কোটি টাকা) আটক করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে বলিভিয়া থেকে আসা সূর্যমুখী তেলের  ভেতরে মিশ্রিত কোকেন উদ্ধার, পাকিস্তান থেকে আগত ভারতীয় নকল মুদ্রা (প্রায় ৪০ কোটি টাকা) আটক, ১২ কনটেইনার মদ ও সিগারেট আটক,  কারনেট সুবিধার অপব্যবহার করে ব্যবহূত ও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনীত প্রায় ৭০টি অবৈধ বিলাসবহুল গাড়ি আটকের ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কাস্টমসের এসব কার্যক্রমে সত্ ব্যবসায়ীরা উত্সাহিত হয়েছেন।

 
কাস্টমস বাণিজ্য সহজীকরণের পাশাপাশি রাজস্ব আহরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অতীতে কাস্টমস ছিল এককভাবে রাজস্ব আহরণকারী। বাণিজ্য উদারীকরণের স্বার্থে শুল্ককর কমানো (আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহের আওতায় যৌক্তিকীকরণ) হলেও এখনো কাস্টমস মোট রাজস্ব আহরণ প্রায় ২৪ শতাংশ। এই চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) মোট ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে কাস্টমসের অংশ ৯২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি কাস্টমস প্রকৃতপক্ষে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জনগণের জীবনমান অনুযায়ী বিভিন্ন স্তরের শুল্ক আরোপ করে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে। উদাহরণস্বরূপ, বিলাসবহুল গাড়ির (৪০০০ সিসির ওপরে) ওপর ৮৫০ শতাংশ শুল্ককর আরোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি চাল, ডাল, ওষুধ, পেঁয়াজ ইত্যাদির শুল্ককর বলতে গেলে নেই। এই বিবেচনায় কাস্টমস সাধারণ জনগণের কল্যাণেও কাজ করছে।

 

BBS cable ad

কাস্টমস এর আরও খবর: