শিরোনাম

South east bank ad

৫০ লাখ প্রবাসীকে ভোটে আনতে চায় ইসি

 প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন   |   নির্বাচন কমিশন

৫০ লাখ প্রবাসীকে ভোটে আনতে চায় ইসি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫০ লাখ প্রবাসী ভোট দেবেন, এমন টার্গেট নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে ভোটার প্রতি ৭০০ টাকা ব্যয় ধরে ৪০০ কোটি খরচ করার কথা ভাবছে সংস্থাটি।

ইসি কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও তা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভবিষ্যতের ওপরেই নির্ভর করবে বলে মনে করছেন তারা।

বিভিন্ন দেশে কত প্রবাসী ভোটার
নির্বাচন কমিশন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি-বায়রাসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছে ৪০টি দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের আধিক্য রয়েছে। এসব দেশকে মাথায় রেখে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দেশগুলো হলো- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান, লিবিয়া, সুদান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, হংকং, মিশর, ব্রুনাই, মরিশাস, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, স্পেন, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস। এসব দেশে এক কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ জন প্রবাসী রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে রয়েছে বেশি প্রবাসী রয়েছে সৌদি আরবে ৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ জন। আর সবচেয়ে কম রয়েছে নিউজিল্যান্ডে দুই হাজার ৫০০ জন।

এদের মধ্যে ৭০ শতাংশের মতো ভোটারের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) আছে বলে ধারণা করছে ইসি। যাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ প্রবাসী ভোটারের সাড়া পাবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, বিভিন্ন দেশে ঠিক কত সংখ্যক প্রবাসী রয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই। প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমরা কথা বলে জেনেছি ১ কোটি ৩০ লাখের মতো বা কিছু বেশি প্রবাসী রয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশ বাংলাদেশির এনআইডি আছে। সেই হিসেবে ৫০ লাখের মতো ভোটারকে পাবো বলে আশা করছি। যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নির্বাচনে প্রবাসী ভোটের হার ২০ থেকে ২২ শতাংশের মতো হয়।

ভোটার প্রতি ব্যয় ৭০০ টাকা, প্রতি লাখে ৭ কোটি
প্রবাসীদের ভোটে আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারা যেহেতু অনলাইনে নিবন্ধন করে ভোট দেবেন, তাই তৈরি করা হচ্ছে ‘পোস্টাল ব্যালট বিডি’ নামে একটি অ্যাপ । এজন্য প্রকল্প ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া ভোটার প্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০০ টাকা। সব মিলিয়ে ব্যয় হচ্ছে ৪০০ কোটি টাকা।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ভোটার প্রতি সব মিলিয়ে ব্যয় ধরা ৭০০ টাকা। এই টাকা ব্যালট পেপার প্রবাসীদের কাছে ডাকযোগে পাঠানো, আবার আনাসহ অন্যান্য কাজে ব্যয় হবে।

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, প্রতি এক লাখ ভোটারের জন্য ব্যয় হবে ৭ কোটি টাকার মতো। এ ছাড়া অ্যাপ তৈরিসহ প্রযুক্তিগত কাজের জন্য প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে ৪৮ কোটি টাকার।

কীভাবে, কখন ভোট দেবেন প্রবাসীরা
আগামী নভেম্বরে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার জন্য অনলাইন নিবন্ধনের অ্যাপটি তৈরি করে ফেলবে ইসি। এরপরেই প্রবাসীদের নিবন্ধনের জন্য প্রচারযজ্ঞ চালানো হবে। এক্ষেত্রে তারা ওই অ্যাপের মাধ্যমে নিজের এনআইডি নম্বর, বর্তমান ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন।

এভাবে যারা নিবন্ধন করবেন তাদের জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় প্রবাসীদের পৃথক ভোটার তালিকা করা হবে। তফসিল ঘোষণার পর সেই তালিকা অনুযায়ী পোস্টাল ব্যালট ছাপানো হবে। যে ব্যালটে শুধু দলগুলোর মার্কা তথা প্রতীক থাকবে। কোনো প্রার্থীর নাম থাকবে না। কারণ প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার আগে কারো নাম ব্যালটে ছাপানো যায় না। আর প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যালট পাঠানোর সময় কুলোবে না। আবার মামলার রায়ে কেউ প্রার্থিতা পেলে নতুন করে ব্যালট ছাপাতে হবে। তাই আগেই প্রার্থীর নাম ব্যতীত ব্যালট ছাপানো হবে। সেই ব্যালট প্রবাসীর দেওয়া ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে ডাক বিভাগের মাধ্যমে।

এদিকে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হলে অনলাইনে নিবন্ধনকারীর মোবাইলে মেসেজ দিয়ে বলে দেওয়া হবে-আপনি অনলাইনে গিয়ে আপনার এলাকার চূড়ান্ত প্রার্থীদের তালিকা দেখুন। পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে ভোট দিন। সেই মেসেজ পেয়ে প্রবাসী ভোটার তার ভোটটি দিয়ে ডাক যোগে পাঠাবেন।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ডাক বিভাগ জানিয়েছে সবচেয়ে দূরের দেশে একটি চিঠি পাঠাতে এবং আনতে ২৮ দিন লাগে। তাই দেশের ভোটারদের আগেই প্রবাসী ভোটাররা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। এজন্য দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার চালানো হবে।  

ইসি সচিব বলেন, যাদের এনআইডি আছে তারাই কেবল এই সুযোগ পাবেন। কারণ এনআইডি ছাড়া নিবন্ধন করার সুযোগ থাকবে না।

প্রবাসীর ভোট কোথায় থাকবে, গণনা হবে কখন
দেশে ভোটের অন্তত ২০ দিন আগে একজন প্রবাসী ভোট দেবেন। এক্ষেত্রে ভোটার যে বর্তমান ঠিকানায় নিবন্ধন করেছেন, সেই ঠিকানায় একটি খামে একটি ব্যালট পেপার এবং আরো দুটি খাম যাবে। আর ভেতরে থাকা একটি খামে আসন ও রিটার্নিং কর্মকর্তার ঠিকানা থাকবে। ভোটার কলম দিয়ে নির্ধারিত উপায়ে ব্যালট পেপারে তার ভোট দিয়ে তা আবার রিটার্নিং কর্মকর্তার ঠিকানা লেখা খামে ভরে ডাকযোগে পাঠিয়ে দেবেন। সেই ভোট জেলা প্রশাসনের ট্রেজারিতে জমা থাকবে। ভোটের দিন সেগুলো সংশ্লিষ্ট আসনে দেশের ভোটের সঙ্গে গণনা করা হবে।

আখতার আহমেদ বলেন, প্রবাসীরা আগেই ভোট দিলেও সেগুলো ট্রেজারিতে থাকবে। ভোটের দিন সংশ্লিষ্ট আসনের ভোটগ্রহণ শেষে গণনা করা হবে।

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণেই প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টির কথা বলেন। নির্বাচন কমিশনও সে মোতাবেক প্রস্তুতি নিতে থাকে। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এক্ষেত্রে তিনটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হলেও রাজনৈতিক দলগুলো থেকে পোস্টাল ব্যালটের প্রতি আগ্রহের কথা ওঠে আসে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আইটি বেইজড পোস্টাল ব্যালটে ভোট ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে সংস্থাটি। প্রবাসীরা ছাড়াও ৭১টি জেলের কয়েদি ও সরকারি চাকরিজীবীরা (ভোটের দায়িত্বে থাকবেন যারা) এই সুযোগ পাবেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন আহমদ ইতিমধ্যে বলেছেন, পরীক্ষামূলক বা সীমিত পরিসরে হলেও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই তার কমিশন এই সৃষ্টি করতে চায়। এজন্য প্রবাসীদের সংশ্লিষ্ট দেশে গিয়ে ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রমও ত্বরান্বিত করা হয়েছে।

বর্তমানে ১০ দেশের ১৭টি দূতাবাসে ভোটার নিবন্ধন ও এনআইডি সরবরাহের কাজ করছে ইসি। দেশগুলো হলো- সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জাপান। শিগগিরই আমেরিকার পাশাপাশি আরো অন্তত চারটি দেশে শুরু হতে পারে ভোটার নিবন্ধনের এই কাজ।

প্রবাসীরা যেভাবে ভোটার হবেন
বিদেশে বসে ভোটার হওয়ার জন্য অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্র ফরম-২ (ক), মেয়াদ সম্বলিত বাংলাদেশি পাসপোর্ট/মেয়াদহীন পাসপোর্ট/এনআইডিধারী তিন নাগরিকের প্রত্যায়ন, অনলাইন জন্ম নিবন্ধন ও পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি বাধ্যতামূলকভাবে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন কেন্দ্রে (দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট ডেস্কে) জমা দিতে হয়।

এদিকে বিশেষ ৫৬টি উপজেলা/থানার (চট্টগ্রাম অঞ্চল) নাগরিকদের জন্য ‘বিশেষ তথ্য ফরম’ পূরণ, শিক্ষা সনদ, বাবা-মার এনআইডি, মৃত হলে মৃত্যু সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্স/টিআইএন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), কতিপয় দেশের ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), নিকাহনামা এবং স্বামী-স্ত্রীর এনআইডি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), নাগরিকত্ব সনদ (কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান/মেয়র/সিইও কর্তৃক), ইউটিলিটি বিলের কপি (ভোটার এলাকার ঠিকানার বিদ্যুৎ/পানি/গ্যাস বিলের কপি, ভাড়াটিয়া হলে বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র ও বাড়িওয়ালার অনাপত্তিপত্র) জমা দিতে হবে।

বাধ্যতামূলক নয়, এমন তথ্যগুলো নিবন্ধন কেন্দ্রে জমা দিতে না পারলে প্রবাসী নাগরিকরা দেশে বসবাসকারী তাদের আত্মীয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে পারবেন। এরপর কমিশন আবেদনকারীর ঠিকানায় সবকিছুর সত্যতা পেলে ভোটার করে নেবে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ১০টি দেশ থেকে আবেদন এসেছে ৫৫ হাজারের মতো। এদের মধ্যে দশ আঙুলের ছাপ দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ৩০ হাজারের বেশি প্রবাসী।

ইসির এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর এ বিষয়ে বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ১০টি দেশে তাদের ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম চলছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো কয়েকটি দেশে এ কার্যক্রম শিগগিরই চালু হবে।
BBS cable ad