ঢাকার থানাগুলোতে যেভাবে কাজ করছে পুলিশ

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ভেঙে পড়া দেশের পুলিশি ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি এক সপ্তাহেও। নিরাপত্তার শঙ্কায় এখনো পুরোদমে কাজ শুরু করেননি পুলিশ সদস্যরা। প্রাথমিকভাবে সেনা প্রহরায় থানাগুলোকে সচলের চেষ্টা চলছে। সাদা পোশাকে সীমিত জনবল দিয়ে নামমাত্র সাধারণ ডায়েরি (জিডি) কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে কিছু থানা।
এখনো কাজে যোগ দেননি বেশিরভাগ পুলিশ সদস্য। যারা যোগ দিয়েছেন তারা বলছেন, এখনো নিরাপত্তাহীনতায় বাইরে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। এছাড়া যেভাবে পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও থানাগুলোর বাইরের কার্যক্রম শুরু করতে সময় লাগবে।
পুলিশ সদর দফতর থেকে দেশে অধিকাংশ থানার কার্যক্রম চালুর তথ্য দেওয়া হলেও নিরাপত্তাজনিত কারণের পাশাপাশি আরও কিছু কারণে এখনো নিয়মিত অপারেশনাল কাজে নামতে পারেনি পুলিশ। রোববার সারাদেশে ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৫৯৯টির কার্যক্রম চালুর দাবি করেছে পুলিশ সদর দফতর।
থানার অপারেশনাল কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্য বলছে, রোববার পর্যন্ত মেট্রোপলিটনের ১১০টি থানার মধ্যে ৯৭টি এবং জেলার ৫২৯টি থানার মধ্যে ৫০২টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
দেশের ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের চাপে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে একের পর এক ঢাকার থানাগুলোতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে।
ঢাকার বেশিরভাগ থানায় হামলা হলেও অক্ষত রয়েছে রমনা থানা। তাদের কোনো গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়নি কিংবা কোনো সদস্য সহিংসতায় আহত হননি। নির্দেশনা অনুযায়ী থানার কার্যক্রম চালু রয়েছে। স্বল্প পরিসরে কাজ চললেও থানার সবাই এখনো বাইরে যাওয়ার সাহস করছেন না; সবাই থানার ভেতরেই দায়িত্ব পালন করছেন।
রমনা থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া বলেন, আমার থানার কোনো ফোর্স আহত হয়নি, আমাদের মাধ্যমেও কেউ আহত হননি। অনেকে তাদের সহকর্মীদের হতাহতের ঘটনায় ট্রমাটাইজড হয়ে গেলেও আমি মানসিকভাবে পূর্ণ সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছি। তারাও সবাই থানায় আছেন। এখানে জিডি ও মামলা নেয়া হচ্ছে। তবে বাইরের অপারেশনাল কার্যক্রম এখনো শুরু করতে পারিনি।
রমনা থানার ঠিক বিপরীত চিত্র মোহাম্মদপুরে। ৫ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানার প্রতিটি রুমে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। পাশাপাশি অস্ত্রসহ সবকিছু লুট করা হয়, আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় অবশিষ্ট সব।
মোহাম্মদপুর থানার ঈমাম দিদারুল ইসলাম বলেন, থানার বেশিরভাগ পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে থানায় সেবা দেওয়ার মতো পরিস্থতি না থাকায় তারা এসে এসে চলে যান।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক জানান, তার সবগুলো থানা (তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরেবাংলা নগর ও হাতিরঝিল) চালু হয়েছে। তবে সব থানায় এখনই জিডি-মামলা করা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত তেজগাঁও, হাতিরঝিল ও শেরেবাংলা নগর থানায় মামলার এজাহার দায়ের করা যাচ্ছে।
পল্টন ও মতিঝিল থানাতেও শুধুমাত্র জিডি নেওয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হারানো জিডি বা পারিবারিক কারণে জিডি নেয়া হচ্ছে। পুলিশের অনেক সদস্যই এখনো কাজে যোগ দেননি।
পল্টন থানার এক পুলিশ সদস্য বলেন, আমরা এখনো বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছি। পোশাকসহ চলাফেরা তো অনেক পরের হিসেব, বাইরে বের হলে পুলিশ পরিচয়ই দিচ্ছি না আমরা। পুলিশের আইডি কার্ডও সঙ্গে রাখছি না।
তিনি আরো বলেন, পুলিশের সব সদস্য থানায় এলেও পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। অনেক থানার যানবাহন পুড়িয়ে দিয়েছে। দায়িত্ব পালনের স্বার্থে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে বেগ পেতে হবে।