South east bank ad

নির্বাচিত সরকারই দেশের গতিপথ নির্ধারণ করবে —সেনাপ্রধান

 প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ১০:২৩ পূর্বাহ্ন   |   সেনা প্রধান

নির্বাচিত সরকারই দেশের গতিপথ নির্ধারণ করবে —সেনাপ্রধান

নির্বাচিত সরকারই দেশের গতিপথ নির্ধারণ করবে বলে মনে করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সেক্ষেত্রে আসন্ন নির্বাচনে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে বাহিনীর সব সদস্যকে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। ঢাকা সেনানিবাসের সেনা প্রাঙ্গণে গতকাল অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান এ নির্দেশনা দেন। ঢাকায় অবস্থানরত সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন। অনেক কর্মকর্তা যুক্ত হন ভার্চুয়ালি।

আলোচনায় নির্বাচন ছাড়াও করিডোর, বন্দর, সংস্কারসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। সেখানে উপস্থিত সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্যগুলো জানা গেছে।

সেনাপ্রধান ও সেনাসদস্যরা জাতীয় নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সেনাবাহিনীকে অন্ধকারে রাখার বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সেনাবাহিনীকে বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা তাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। এসব সিদ্ধান্ত জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের নেয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান তার আগের বক্তব্য ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি স্পষ্ট করে জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। কেবল একটি নির্বাচিত সরকার দেশের গতিপথ নির্ধারণ করবে; এমন প্রশাসন নয়, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয় বা জবাবদিহি করতে ইচ্ছুক নয়।

জানা যায়, অনুষ্ঠানের প্রথম অংশে সকাল সাড়ে ১০টায় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অফিসারদের উদ্দেশে প্রায় ৩০ মিনিট বক্তব্য দেন। এরপর প্রায় সোয়া ১ ঘণ্টা অফিসারদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এ সময় তিনি হতাশা ব্যক্ত করে জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সেনাবাহিনীর অক্লান্ত ও নিঃস্বার্থ ভূমিকা সত্ত্বেও বিভিন্ন মহল থেকে সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানকে টার্গেট করা হচ্ছে। জাতিসংঘের মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট বিষয়ে যে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে, তাতে সেনাবাহিনীর কোনো বক্তব্য নেয়া হয়নি।

মানবিক করিডোরের মতো স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার নির্বাচিত সরকার ছাড়া আর কারোর সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন সেনাপ্রধান। তিনি মনে করেন, শুধু একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারই যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অনুষ্ঠানের পরের অংশে এক অফিসারের প্রশ্নের জবাবে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান স্পষ্টভাবে বলেন, দেয়ার উইল বি নো করিডোর। একইভাবে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার নির্বাচিত সরকারের বাইরে আর কারোর নেই বলেও মন্তব্য করেন সেনাপ্রধান।

অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে প্রাথমিক বক্তব্যে সেনাপ্রধান নিরলসভাবে কাজ করে দেশের প্রতি দায়িত্ব পালনের জন্য সেনাবাহিনীর সব সদস্যকে অভিবাদন জানান। তবে বিভিন্ন কারণে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলাসহ সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে হতাশাও ব্যক্ত করেন তিনি। সার্বিকভাবে দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সেনাপ্রধান মনে করেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বেসামরিক প্রশাসনসহ সব সংস্থা ভেঙে পড়েছে এবং পুনর্গঠিত হতে পারছে না। শুধু সশস্ত্র বাহিনী এখন পর্যন্ত টিকে আছে এবং দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান উল্লেখ করেন, প্রথম দিন থেকেই দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে তিনি সরকারকে বারবার অনুরোধ করেছেন। তবে সরকার সে বিষয়ে সত্যিকার অর্থে সিরিয়াস নয়। একের পর এক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি জানান, এ বিষয়েও সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

নয় মাস ধরে সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি অভিভাবকহীন হয়ে রয়েছেন বলেও কয়েকবার উল্লেখ করেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। চাতক পাখির মতো নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের জন্য তিনি রাজনৈতিক নেতাদের দিকে তাকিয়ে আছেন বলেও উল্লেখ করেন। একটি নির্বাচিত সরকার সেনাবাহিনীর জন্য অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। এর ফলে সার্বিকভাবে দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

যত শিগগিরই সম্ভব একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে সেনাপ্রধান উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানের শেষ অংশে এক অফিসারের প্রশ্নের জবাবে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, অ্যান ইলেকটেড গভর্নমেন্ট উইল টেক ওভার অন ওয়ান জানুয়ারি, ইফ নট আরলিয়ার।

আসন্ন নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে সততার সঙ্গে নিরপেক্ষ থেকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে দিকনির্দেশনা দেন সেনাপ্রধান। দীর্ঘ সময় ধরে সেনাসদস্যরা শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন রয়েছেন, যা সার্বিকভাবে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে আলোচনায় উঠে আসে। তাই একটি নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর যত শিগগিরই সম্ভব সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেবেন বলে জানান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এটা না করতে পারলে বিদ্যমান বিশ্ব পরিস্থিতি ও প্রতিবেশী অঞ্চলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে সব সেনাসদস্যকে অর্পিত দায়িত্ব সর্বোচ্চ কর্তব্যপরায়ণতা ও আনুগত্যের সঙ্গে পালন করার জন্য নির্দেশ দেন সেনাপ্রধান।

এক অফিসারের প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান নির্দেশ দেন, মজলুমদের অশ্রুজল যাতে না ঝরে। একই সঙ্গে তাদের অধিকার রক্ষায় সুনির্দিষ্টভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। সবশেষে সেনাপ্রধান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ এবং অর্পিত দায়িত্ব ও দেশপ্রেমের আদর্শে অবিচল থাকার নির্দেশনা দেন। নিজ অবস্থান ও আদর্শে অবিচল থাকলে কোনো মহলই সেনাবাহিনী ও দেশের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না বলে উল্লেখ করে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তার বক্তব্য শেষ করেন বলে একাধিক সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।

BBS cable ad

সেনা প্রধান এর আরও খবর: