উৎপাদনে ফিরল উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি

উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি এক বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর উৎপাদনে ফিরেছে।কারখানার একটি ইউনিট অগ্নিকাণ্ডে বন্ধ হয়ে গেলে মেরামতের কারণে বন্ধ ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। জুনে মেরামতের কাজ শেষ হয়। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জারি করা বিধিনিষেধের কারণে উৎপাদনে যেতে দেরি হচ্ছিল। গত শনিবার ৭ আগস্ট যা চালু করা হয়। প্রথম দিনেই ১৬ হাজার বর্গফুট গ্লাস উৎপাদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৩ জুন অগ্নিকাণ্ডে প্রতিষ্ঠানটির দুই নম্বর চুল্লিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারও কয়েক বছর আগে থেকে বন্ধ ছিল এক নম্বর চুল্লির উৎপাদনও। সর্বশেষ দুর্ঘটনার পর কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কারখানাটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাওয়া যায়নি।
পরে বিসিআইসি নিজেদের অর্থায়নে চুল্লিটি মেরামতের উদ্যোগ নেয়। প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশীয় ব্যবস্থাপনায় এটি মেরামত করা হয়। মেরামত-পরবর্তী ভারত থেকে একজন বিশেষজ্ঞ চুল্লিটি পরীক্ষা করার জন্য আসার কথা ছিল। কিন্তু করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি বিশেষজ্ঞ আসতে দেরি হয়। যে কারণে উৎপাদন কার্যক্রমও পিছিয়ে যায়। এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত দেশীয় বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে ফার্নেস চুল্লিটি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
উসমানিয়া গ্লাসের উৎপাদন বিভাগের প্রধান আল আমিন মুন্সি এ বিষয়ে জানান, জুলাইয়ে কারখানার উৎপাদনে ফেরার কথা ছিল। ওই সময়ে প্রায় এক সপ্তাহ পরীক্ষামূলকভাবে কারখানা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি ঘোষণায় কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেলে উসমানিয়ার উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়। তবে ৫ আগস্ট বৃহস্পতিবারের পর সব ধরনের কলকারখানা খুলে দেওয়া হলে উসমানিয়া গ্লাস কারখানায় শনিবার থেকে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। টানা ৩টি শিফটের মাধ্যমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করছে উসমানিয়া কর্তৃপক্ষ।
তথ্যমতে, জুনের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক বিভাগের অধ্যাপক আবদুল মতিনের নেতৃত্বে ৭ জনের একটি বিশেষজ্ঞ কারখানার সংস্কার করা চুল্লিটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। বিশেষজ্ঞদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চুল্লিটিতে প্রায় এক মাসের হিটিং কার্যক্রম চালু রাখার পর উৎপাদনে যায় উসমানিয়া কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিম ক্ষতিগ্রস্ত চুল্লির মেরামত কাজ পরির্দশন করার পর জুনের শেষ দিকে পরীক্ষামূলকভাবে কারখানা চালু করা হয়। কোরবানির ঈদের আগে প্রায় ১ লাখ বর্গফুট গ্লাস উৎপাদন করলেও লকডাউনের কারণে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে সরকারি অনুমোদন সাপেক্ষে দীর্ঘদিন পর স্থায়ীভাবে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে উসমানিয়া গ্লাস।
উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির ২টি চুল্লি চালু অবস্থায় বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ২ কোটি ১ লাখ বর্গফুট কাঁচ। প্রতি বছর কারখানাটি লক্ষ্যমাত্রার ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কাচ উৎপাদন করতে সক্ষম ছিল। পুরনো একটি চুল্লি বন্ধ থাকায় বর্তমানে মেরামত করা চুল্লিতে বার্ষিক ১ কোটি ৪০ লাখ বর্গফুট কাচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে উৎপাদন খরচ কমে যাবে। এতে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানের ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।