South east bank ad

রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীরা অসহায় সিএনজি চালকদের কাছে

 প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন   |   সারাদেশ

রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীরা অসহায় সিএনজি চালকদের কাছে
লক্ষ্মীপুর :

সড়ক দূর্ঘটনায় হাত ও পা ভেঙে যাওয়া বাবা আজমল হককে (৫৫) নিয়ে রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছেন আবদুল কাইয়ুম (৩০)। ভিতরে বেশ কিছুদিন যাবৎ চিকিৎসাধীন ছিলেন তারা। সেবা করতে গিয়ে কাইয়ুম কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই কাইয়ুম ও তার অসুস্থ্য  বাবাকে নিয়ে চরমোহনা গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যেতে চাচ্ছিলেন আরেক বন্ধু জুয়েল (২৯)। কিন্তু বিপত্তি বাধে সেখানেই। হাসপাতালের সামনে থাকা একটি সিএনজি ভাড়া দুইশ টাকার নিচে যাবে না। অথচ স্বাভাবিকভাবে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ভাড়া হওয়া উচিত বলে অভিযোগ কাইয়ুমের।
কাইয়ুম বলেন, অসুস্থ বাবাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে নিকটবর্তী এক আত্মীয়ের বাসায় যাবো। কিন্তু একটা সিএনজিও স্বাভাবিক ভাড়ায় যেতে রাজি হচ্ছে না। তারা দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করছে। আমরা তো গরিব মানুষ, কীভাবে এত ভাড়া বেশি দিয়ে যাই?
শুধু কাইয়ুম নয়, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে রাস্তায় অস্থায়ী স্ট্যান্ড বানিয়ে বেশ কয়েকটা সিএনজি অটোরিকশা দাঁড়ায়। প্রায় সময় রোগীর সঙ্গে তাদের স্বজনরাও অনেকে বের হচ্ছেন হাসপাতাল থেকে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকছেন পরিবহনের জন্য। গন্তব্যে যেতে সিএনজি-অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে কথা বলে গেলেই অতিরিক্ত ভাড়া দাবী করে বসে।  বনিবনা না হওয়ায় আবার তারা ফিরে আসছেন হাসপাতালের গেটের দিকে।
শনিবার (১৮ সেপ্টেম্ব) সকাল নয়টার সময় সিএনজি চালকদের কাছে হয়রানির শিকার হতে দেখা গেছে রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা রোগীসহ বিভিন্ন-যাত্রীদের। অন্যদিকে- কয়েকমাস মাস ধরে অস্থায়ী স্ট্যান্ড তৈরি করে সকাল ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত হাসপাতালের সামনে থেকে যাত্রী পরিবহন করছে রায়পুরের বিভিন্ন স্থানসহ লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরে।

আরেক রোগী অল্প বয়সী হামিদ। দূর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পায়ের চিকিৎসার পরবর্তী সেবা নিতে মায়ের সঙ্গে এসেছে রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছে। সেবা নেয়া শেষে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তাদেরও সিএনজি চালকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের স্বীকার হতে হয়েছে।  তিনি বললেন, পা ভালো থাকলে তো বাসেই চলে যেতাম। কিন্তু পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাই বাসে চড়ে যেতে পারছি না। এই অসহায়ত্ব দেখে সিএনজি চালকরা ভাড়া বেশি চাচ্ছে।

হাসপাতালের সামনে থাকা অস্থায়ী ওষুধ দোকানি মোঃ রাশেদ ও মোঃ মাজেদ এ বিষয়ে বলেন, প্রতিটি সিএনজি চালক রোগী ও রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। শুধু তাই না, চাঁদপুর হয়ে ঢাকা যাওয়ার সময় অস্থায় স্টান্ড বানিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে হয়রানীর শিকার হতে হয়। মানুষের অসহায়ত্বকে পূঁজি করে এরা গলা কাটা ভাড়া নেয়। উপায় না পেয়ে মানুষও হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বেশি ভাড়ায় যেতে বাধ্য হয়। কারণ একজন রোগীকে নিয়ে বের হয়েছে তখন গাড়ির জন্য কতক্ষণ অপেক্ষা করবে? তাই বাধ্য হয়ে তারা যায়। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সিএনজি চালকরাও একজোট হয়ে ভাড়া বেশি চায়।

এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিএনজি চালক মোঃ সোহেল রহমান বলেন, ‘ভাই এখানে আমাগোরে বেশি একটা দোষ নাই। কারণ আমাগো সিএনজি জমা খরচ বেশি, এরপর হাসপাতালের সামনে সিএনজি নিয়ে দাঁড়ালে বিভিন্ন জনকে টেকা দেওয়ান লাগে, না হইলে এখানে দাঁড়াতে দেয় না। তাই অনেক সময় একটু বেশি ভাড়া নিই যাত্রীদের কাছ থাইকা।’

নিজের অসহায়ত্বের কথা উল্লেখ করে আরেক অপেক্ষমাণ রোগীর স্বজন মোঃ দুলাল বললেন, হাসপাতালের সামনে থেকে যাব চরবংশীর মোল্লারহাট গ্রামে। কমপক্ষে ৬টা সিএনজি চালকের সঙ্গে কথা বলেছি, কেউ যাবে না। তবে দু’জন যেতে চায়, তারা ভাড়া নিবে ২০০ টাকা। এতটুকু দূরত্বে এত টাকা ভাড়া হলে মানুষ কীভাবে যাবে? আর যেহেতু রোগী সঙ্গে আছে, আছে ব্যাগ-ব্যাগেজও। তাই এরা সুযোগ বুঝে টাকা আদায় করতে চায়। আর যেহেতু আমরা এখন অসহায় তাই বাধ্য হয়েই তাদের চাহিদা অনুযায়ী বেশি ভাড়ায় যেতে হচ্ছে।

রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার বাহারুল আলম বলেন, সরকারি হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সিএনজি চালকদের কারণে প্রায় সময় প্রধান সড়কে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। কয়েকবার নিষেধ করার পরেও শুনেনা তারা। আমাদেরও করার কিছু নেই।

এ ব্যাপারে রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিন চৌধুরী বলেন, কয়েকদিন পর পর রায়পুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেইট থেকে আলিয়া মাদ্রাসা পর্যন্ত অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ডগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।  

BBS cable ad