চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে গণধর্ষণ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ গ্রেফতার ৪
সাভারের আশুলিয়া থানাধীন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে পিকনিকের কথা বলে ডেকে নিয়ে 'মজোর' সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে গণধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের পর জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগে বেসরকারি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি মৃদুল দেওয়ানের ভাইসহ ৩ শিক্ষার্থী ও বহিরাগত একজনকে গ্রেফতার করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন-গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী দেলোয়ার ভূইয়া, তাজুল ইসলাম তাজ, সিনিয়র অন্তু দেওয়ান এবং বহিরাগত শ্রাবণ শাহা।
পুলিশ জানায়, অন্তু দেওয়ান গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য নির্বাচিত ভিপি ইয়াছিন আল মৃদুল দেওয়ানের চাচাতো ভাই।বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ত্রাস ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত এবং একচ্ছত্রভাবে মেয়ে শিক্ষার্থীদের উত্যক্ত সঙ্গে জড়িত। ভিপির ভাই পরিচয়ের কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পেত না।
এর আগে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) আশুলিয়া থানায় চারজনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিগত ৭ এপ্রিল সকালে পিকনিকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ভুক্তভোগীকে আশুলিয়ার ফুলেরটেক এলাকায় নিয়ে যায়। পথিমধ্যে কোমল পানীয় 'মজোর' সঙ্গে চেতনানাশক ঔষুধ খওয়ালে কিছুক্ষণ পর অচেতন হয়ে যান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। ওইদিন বিকাল ৫টার দিকে জ্ঞান ফিরলে আসামিদের ফুলের টেকের ছাত্র-ম্যাসে নিজেকে দেখেন এবং বুঝতে পারেন তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করা হয়েছে। পরে তিনি ডাক-চিৎকার শুরু করলে আসামিরা ধর্ষণের ধারণকৃত ভিডিও ও অশ্লীল ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল করে দেওয়াসহ এসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেওয়ার হুমকি দেয়।
ঘটনার পর থেকে তাকে ধর্ষণের ভিডিও ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে একাধিক ধাপে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে কয়কবারে মোট ৯৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগী পুলিশকে জানান, বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে ক্যাম্পাসে গেলে তাকে আবারও শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসামিরা। পরে তিনি বাসায় চলে এসে পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানান।
তিনি বলেন, এর আগে দ্বিতীয় বারের মতো গত ৬ নভেম্বর সকালেও আসামিরা অন্তু দেওয়ানের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের জন্য তার ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে ভুক্তভোগীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ এলোপাথাড়ি চড় থাপ্পর দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে অন্তু দেওয়ানের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আবারও বোতলে থাকা বিষাক্ত নেশাজাতীয় পানীয় ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক খেতে বাধ্য করে। ঘটনার পর পালিয়ে এসে অসুস্থ অবস্থায় কোনোমতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে গুরুত্বর অসুস্থ ও অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। পরে সহপাঠী ও শিক্ষকরা গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেলে তাকে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে ৫ দিন তিনি চিকিৎসা নেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিলে আসামিরা তার ওপর আরও চড়াও হন।
চিকিৎসা শেষে ক্যাম্পাসে আসার পর আবার গত ২৬ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের একাডেমিক কক্ষে গেলে আসামিরা সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া লিখিত অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয় ও মারধর করে। পরে বিকাল ৩টার দিকে মুচলেকা রেখে তাকে ছেড়ে দেয়।
তিনি বলেন, গত ২৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও ডিপার্টমেন্ট প্রধানের বরাবর অভিযোগ দেওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৭ দিনেও আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় নিরাপত্তার কারণে বাধ্য হয়ে গতকাল বুধবার আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার ওসি আব্দুল হান্নান বলেন, গত ৩ এপ্রিল থেকে ধারাবাহিক ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা নিয়ে মামলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ঐ শিক্ষার্থী তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থানায় এসে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং সারারাত অভিযান চালিয়ে মাত্র ১৭ ঘণ্টার মধ্যেই অভিযুক্ত চারজনকেই আশেপাশে এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ওসি বৃহস্পতিবার সকালে যুগান্তরকে জানান, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বা ভিপি ইয়াছিন আল মৃদুল দেওয়ানের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত ৪ জনের মধ্যে তিনজন ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, একজন বহিরাগত সহযোগী।


